রুপন কর অজিত || বরিশাল সদর জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে চলা দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যে সাধারণ রোগীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। শনিবার (২৫ অক্টোবর) সকালে হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে এক নারী দালালকে আটক করেছে নতুন বাজার বগুড়া পুলিশ ফাঁড়ি।
সূত্র জানায়, প্রতিদিন বরিশাল সদর উপজেলা ও আশপাশের এলাকা থেকে হাজারো মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু হাসপাতালের ভেতর ও বাইরে অবস্থান নেওয়া দালালরা রোগী ও স্বজনদের প্রলোভন দেখিয়ে কাছাকাছি বিভিন্ন বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায় কমিশনের আশায়। এতে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা, বাড়ছে ভোগান্তি ও চিকিৎসা ব্যয়।
হাসপাতালের সামনের ও পাশের রাস্তায় অবস্থিত জেনারেল ডিজিটাল মেডিকেল সার্ভিসেস, পদ্মা ডায়াগনস্টিক, খিদমাহ্, হেল্থ হ্যাভেন ডিজিটাল, যমুনা ডায়াগনস্টিক সহ বেশ কয়েকটি ল্যাব—এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দালালদের যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার সকালে এক সংবাদকর্মী রোগীর স্বজন সেজে দালালদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। এ সময় এক নারী দালাল তাকে “জেনারেল ডিজিটাল মেডিকেল সার্ভিসেস” নামের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেওয়ার প্রস্তাব দেন। সাংবাদিক পরিচয় প্রকাশ পেতেই ওই নারী বিষয়টি অস্বীকার করে পালানোর চেষ্টা করেন। এসময় রুগীর স্বজনরা তাকে আটক করে জিগ্যেসাবাদ করলে তিনি লাইফকেয়ার প্যাথলজির, জেনারেল ডিজিটাল মেডিকেল সার্ভিসেস এর নাম স্বীকার করেন। খবর পেয়ে বগুড়া পুলিশ ফাঁড়ি ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারীকে আটক করে কোতয়ালি মডেল থানায় পাঠিয়ে দেয়।
চিকিৎসা নিতে আসা ভুক্তভোগীরা বলছেন, দালালদের কারণে তারা বারবার প্রতারিত হচ্ছেন। রোগীর স্বজন মো. জাকির হোসেন বলেন, “আমার স্ত্রীকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করাতে হাসপাতালে এসেছিলাম। এক মহিলা এসে বলল, এখানে ভিড়, পাশে করলে রিপোর্ট তাড়াতাড়ি পাবেন। পরে দেখি চারগুণ বেশি টাকা নিয়েছে।”
আরেক রোগীর আত্মীয় রুমা বেগম বলেন,“আমরা ভাবছিলাম হাসপাতালের লোক, কিন্তু পরে জানলাম ডায়াগনস্টিকের দালাল। সাধারণ মানুষ বুঝতেই পারে না কে আসল, কে ভুয়া।”
কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, “আটকের পর মুচলেকা দিয়ে ঐ নারীকে ছেড়ে দেয়া হয়। ” বরিশাল সদর হাসপাতালের পরিচালক মলয় কৃষ্ণ দে বলেন, “হাসপাতালের নামে কেউ যদি রোগীদের বিভ্রান্ত করে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা পুলিশকে সহযোগিতা করছি।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বহুদিন ধরে হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় এই দালাল চক্র সক্রিয় রয়েছে। তারা রোগী ও স্বজনদের ভুল বুঝিয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে কমিশন আদায় করে আসছে। এতে সরকারি হাসপাতালের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং জনসাধারণের আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে।