
অনলাইন ডেস্ক// সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে ভোলার চরাঞ্চল উচ্চ জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। এর ফলে ভোলার ফেরিঘাটও ডুবে গেছে। আজ, শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকাল থেকে দমকা হাওয়া বইছে এবং গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে।
ভোলা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় ভোলাসহ উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টিপাতের সঙ্গে টানা দমকা হাওয়া বইছে। এ কারণে সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে এবং ভোলার নদীগুলোকে ১ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় ভোলার ছয়টি নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, শুক্রবার মেঘনায় জোয়ারের উচ্চতা ছিল ৩ দশমিক ৭০ মিটার। বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে জোয়ার প্লাবিত হওয়ার কারণে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটের হাইওয়াটার ও লোওয়াটার ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে ডুবে যাচ্ছে। এ কারণে ফেরি ওঠানামায় সমস্যায় পড়ছেন যানবাহনের চালকেরা।
ভোলা নদীবন্দরের সহকারী পরিচালক রিয়াদ হোসেন বলেন, লঘুচাপে সাগর উত্তাল হলেই ভোলার মেঘনা নদী উত্তাল হয়ে যায়। এ নদীকেও ৩ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ কারণে ঢাকা-মনপুরা-হাতিয়া, ভোলার চরফ্যাশন বেতুয়া-ঢাকা, ভোলা-লক্ষ্মীপুর, দৌলতখান-আলেকজান্ডার, হাকিমুদ্দিন-আলেকজান্ডার, তজুমদ্দিন-মনপুরা নৌপথে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে লঞ্চ, সিট্রাক চলাচল বন্ধ আছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলার রাজাপুর, ভেলুমিয়া, ভেদুরিয়া, কাচিয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চল ও বাঁধের বাইরে, দৌলতখান উপজেলার মদনপুর, মেদুয়া, ভবানীপুর, তজুমদ্দিন উপজেলার মলংচরা, সোনাপুর, মনপুরা উপজেলায় কলাতলীসহ ৭ উপজেলার প্রায় ৭৪টি চরাঞ্চল উচ্চ জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় প্রায় ৩ লাখ লোক বিপদের মুখে বসবাস করছেন।
বেসরকারি সংস্থার উন্নয়নকর্মী মো. ফজলুল হক বলেন, মনপুরা উপজেলার দুর্গম ইউনিয়ন কলাতলী সম্পূর্ণ ডুবে গেছে। সমুদ্রে লঘুচাপের প্রভাবে কলাতলী মনির বাজারে কোমরসমান পানি উঠেছে। তাঁরা জুমার নামাজ পড়তে দাঁড়িয়েছেন, এ সময় জোয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। নামাজ শেষে দেখেন, জোয়ারে প্লাবিত হয়ে তাঁদের জুতো ভেসে যাচ্ছে। এখানকার সরকারি–বেসরকারি অফিস–আদালত, দোকানপাট সব ডুবে গেছে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৬ ফুট উচ্চতায় জোয়ারে কলাতলী প্লাবিত হওয়ায়, এখানকার ধানখেত, বীজতলা, পুকুর-বিল সব ডুবে গেছে।
দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের নাছির শিকদার, জাহাঙ্গীর চৌকিদার জানান, তিন-চার দিন ধরে জোয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে শুক্রবার ভোর থেকে দমকা হাওয়া বৃদ্ধি পেয়েছে। জোয়ারের পানিতে রাস্তাঘাট, খেতখামারে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। আমনের বীজতলা, সবজিখেত ও ধানখেত প্লাবিত হচ্ছে। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না।
সদর উপজেলার রাজাপুরের কৃষক রুহুল আমিন মিজি জানান, জোয়ারের পানিতে রাজাপুরের মধ্য দিয়ে টানা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে কয়েক শ একর ফসলের খেত, ঘরবাড়ি, পুকুর, বিল ডুবে গেছে। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। ঘর থেকে গরু-ছাগল, মুরগি বের করতে পারছেন না। খেত ডুবে থাকার কারণে ঘাস কেটেও আনতে পারছে না। ইউনিয়নের মাটির রাস্তাঘাট ধসে যাচ্ছে জোয়ারের পানিতে।
ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খামারবাড়ি সূত্র জানায়, জুলাই মাসের প্রথম দিকে টানা বৃষ্টিতে ৫ হাজার ৬০৫ হেক্টর আমনের বীজতলার মধ্যে ১ হাজার ৩৫০ হেক্টর বীজতলা প্লাবিত হয়েছে। ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর আউশের খেতের ১৫ হাজার হেক্টর প্লাবিত হয়েছে এবং ৩ হাজার ২৮০ হেক্টর শাকসবজির খেতের ৫৩০ হেক্টর প্লাবিত হয়েছে। এসব ফসলি খেত শুকাতে না শুকাতে আবার উচ্চ জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে।
ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খামারবাড়ির উপপরিচালক মো. খায়রুল ইসলাম মল্লিক বলেন, যদি পানি উঠে আবার নেমে যায়, তবে বীজতলার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে শাকসবজির খেত ডুবে গেলে বা প্লাবিত হলে ক্ষতির আশঙ্কা আছে।”