
নিজস্ব প্রতিবেদক// স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলন থেকে একজনকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে স্বেচ্ছায় কারাবরণের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক মহিউদ্দিন রনি। অন্যান্য আন্দোলকর্মীদের নিয়ে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। তবে প্রায় পাঁচঘণ্টা চেষ্টা করলেও মহিউদ্দিন রনিকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। যদিও শের-ই-বাংলা মিডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক কর্মচারীর এই থানায় দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামি রনি।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা থেকে মহিউদ্দিন রনির নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা কোতয়ালী থানার প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
রনি বলেন, স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে গত ২৩ দিন ধরে আমরা আন্দোলন করছি। আন্দোলনে আমাদের ওপর দফায় দফায় হামলা হয়েছে। অথচ এখন আমাদের ক্লাসে ফেরার কথা। আমাদের দাবি কি খুব বড় কোনো দাবি যা বাস্তবায়ন অসম্ভব? স্বাস্থ্যখাত সংস্কারে তিন দফা দাবি সরকার চাইলেই বাস্তবায়ন করতে পারেন।
তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার দুপুরে আমাদের আন্দোলন থেকে একজনকে ধরে নিয়ে এসেছে। কি কারণে তাকে আটক করা হয়েছে তাও জানায়নি। কোনো কারণ না দেখিয়ে কাউকে ধরে আনতে পারে না পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত সুহান জুলাই যোদ্ধা, তার শরীরে ১৭টি গুলি রয়েছে। তাকে ২০১৮ সালের একটি ছবি দেখিয়ে গ্রেপ্তার করেছেন।
পুলিশ কমিশনার বলছেন, সুহান নাকি ডেভিল, ছাত্রলীগের ক্যাডার। আমাকেও (রনি) গ্রেপ্তারের জন্য নাকি ধাওয়া করেছে। তাই আমিসহ সব শিক্ষার্থী থানায় এসেছি। আমাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করতে হবে। নয়তো সুহানকে ছাড়তে হবে।
মহিউদ্দিন রনি বলেন, সুচিকিৎসা চাওয়া কি আমাদের অপরাধ? আমরা ৯টা পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম পুলিশ কমিশনার থানায় এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন কেন তিনি আমাদের ধরতে চান। কিন্তু তিনি আসেননি। আমরা দাবি করছি আমাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক যতগুলো মামলা করা হয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে।
তিনি বলেন, থানার সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর আমাদের কয়েকজনের সঙ্গে পুলিশের কর্মকর্তারা কথা বলেছেন। শিক্ষার্থীরা যদি মামলা দেন তাহলে নিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। সুহান জুলাই যোদ্ধা তাকে ভুয়া মামলা দিয়ে স্বৈরাচারের দোসর বলে আটকে রাখা হয়েছে। এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় অশ্বিনী কুমার হলের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে।
আন্দোলনের মুখপাত্র নাভিদ নাসিফ জানিয়েছেন, রাত ১১টার দিকে তারা থানা কম্পাউন্ড ত্যাগ করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের সহযোদ্ধা হোসাইন আল সুয়ান এখন হাজতে আছেন।
এদিকে ছাত্রলীগ কর্মী সুহানকে গ্রেপ্তারের সময় অন্যান্য আন্দোলনকর্মীদের নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, নগর ভবনের সামনে থেকে ৭ জনকে আটকের পর কোতোয়ালি মডেল থানায় না নিয়ে বরিশালের রুপাতলী এলাকার পুলিশ লাইন্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের মারধর করে পুলিশ। পরে সেখান থেকে সুহানকে পুলিশের একটি গাড়িতে এবং আহত ৬ জনকে অন্য একটি যানবাহনে উঠিয়ে দিয়ে ডিসি অফিস যেতে বলা হয়। তবে কিছুক্ষণ পরই পুলিশের গাড়ি থেকে সুহানকে নামিয়ে রেখে দ্রুত অন্যত্র চলে যায় পুলিশ।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা যে অভিযোগ করছে তা সঠিক নয়। ঘটনাস্থল থেকে শুধু সুহান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিরা পুলিশের নিষেধ সত্ত্বেও গাড়িতে উঠে পড়ে। পরে তাদের নামিয়ে দেওয়া হয়।