
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: ফরিদপুরের মধুখালীতে অবস্থিত ফরিদপুর চিনিকলের শ্রমিক আলোচিত শাহ মোহাম্মদ রাজন হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মির্জা মাঝহারুল ইসলাম ওরফে মিলন কারারুদ্ধ অবস্থায় থেকে ‘মধুখালী বাজার ব্যবসায়ী পরিষদ’ নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য মনোনয়নপত্র কিনেছেন।
পাশাপাশি ‘Mirza Milon’ নামে তার ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে কারাগারে থাকার পরও প্রচারণা চালানোর বিষয়টি আলোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। ফরিদপুরের বিশিষ্ট আইনজীবীরা একজন দণ্ডিত ব্যক্তির কাছে ফরম বিক্রি ও ফেসবুক প্রচারণাকে আইনের দৃষ্টিতে বেআইনি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ফেসবুক ব্যবহারের বিষয়ে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫ ও কারা বিধি- ১৮৯৪ অনুযায়ী বিচারযোগ্য অপরাধ বলে জানিয়েছেন।
তিনি চিনিকল শ্রমজীবী ইউনিয়ন এবং মধুখালী বাজার ব্যবসায়ী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া তিনি জেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। গত ১০ জুলাই ফরিদপুরের জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালত চিনিকল শ্রমিক রাজন হত্যায় দোষী সাব্যস্ত করে মাজহারুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। রায়ের পর তাকে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারারুদ্ধ হওয়ার দিন তার “Mirza Milon” নামের ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট দিয়ে রায় সম্পর্কে তার শুভাকাঙ্ক্ষীদের আশ্বস্ত করেন।
মধুখালী বাজার ব্যবসায়ী পরিষদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হলে গত সোমবার (২৫ আগস্ট) ফেসবুকে পরপর তিনটি পোস্ট দেন। সেই পোস্ট আবার নিজ আইডি থেকে বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টার দিকে শেয়ার দেন তিনি। পোস্টগুলিতে নিজেকে সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করে মধুখালী বাজার ব্যবসায়ী সমাজের কাছে ‘দোয়া, আশীর্বাদ ও সমর্থন’ প্রত্যাশা করেন।
আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর মধুখালী বাজার ব্যবসায়ী পরিষদের ত্রিবার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) ছিল মনোনয়নপত্র কেনার শেষ দিন। সাধারণ সম্পাদক পদে মাঝহারুলের মনোনয়নপত্র কেনেন তার বড় ভাই মির্জা শাহরিয়া লোটাস।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার ছবিটাও মির্জা মিলনের ফেসবুক আইডিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় আপলোড করা হয়। ওই পোস্টে বলা হয়, ‘আসসালামু আলাইকুম, আমার প্রিয় মধুখালী বাজার ব্যবসায়ীবৃন্দ।
আসন্ন বাজার পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন কিনতে বাধা দেওয়ার পরে আপনাদের দোয়া-আশীর্বাদে শেষপর্যন্ত মনোনয়ন কিনতে পেরেছি। সকলের কাছে দোয়া চাচ্ছি, আমার জন্য দোয়া করবেন। আপনাদের ভোটের মাধ্যমেই আপনাদের মাঝে ফিরে আসব, ইনশাআল্লাহ।’
হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামির কাছে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিক্রি কতটা যুক্তিযুক্ত হয়েছে জানতে চাইলে মধুখালী বাজার ব্যবসায়ী পরিষদ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আবু সাঈদ মিয়া বলেন, পরিষদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ফৌজদারি কোনো অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
তবে নিম্ন আদালতের রায় উচ্চতর আদালতে আপিলের মাধ্যমে স্থগিত করলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন রায়ের স্থগিতাদেশ না পেলে বাছাইপর্বে ওই মনোনয়ন বাতিল হয়ে যাবে।
কারাগারে থেকে মির্জা মিলন কিভাবে ফেসবুক ব্যবহার করছেন জানতে চাইলে ফরিদপুর কারাগারের সুপার নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কারাগারে থেকে কোনো কয়েদির ফেসবুক ব্যবহার করার সুযোগ নেই। সে চালাচ্ছেও না। এটা কীভাবে চলছে আমার জানা নেই।
মাঝহারুলের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারী ভাই মির্জা শাহরিয়া লোটাস বলেন, মাঝহারুল এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেছেন। তাই এ নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোনো বাধা নেই।
“মির্জা মিলন” নামে ফেসবুক আইডি ব্যবহার করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মিলনের ফেসবুক আইডিটি বর্তমানে ব্যবহার করছে তার ছেলে মুগ্ধ। বাবার অনুপস্থিতিতে ছেলে বাবার আইডি ব্যবহারে কোনো বাধা নেই বলে তিনি দাবি করেন।
কারাগারে থেকেও নিজ ফেসবুক আইডি ব্যবহারের দাবির বৈধতা নাকচ করে দিয়েছেন ফরিদপুর জজ কোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী মো. শাহজাহান। তিনি বলেন, কারা বিধি (প্রিজন অ্যাক্ট) অনুযায়ী কারাগারের শৃঙ্খলাভঙ্গ করার দায়ে ওই ব্যক্তি শাস্তি পেতে পারে। পাশাপাশি সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫ অনুযায়ী ইন্টারনেটের অবৈধ প্রবেশাধিকার/অবৈধ ব্যবহারের কারণে অতিরিক্ত মামলাও হতে পারে।