
চরফ্যাশন (ভোলা)প্রতিনিধি: কুরআনের প্রতি ভালোবাসা মুগ্ধ হয়ে ৪০ বছর ধরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরিফ বাদাইয়ের কাজ করেন কারিগর ভোলার চরফ্যাশনের শাহে আলম। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন বই, ফাইল ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র বাঁধাই করেই টানা ৪০ জীবনযাপন করছেন ষাটোর্ধ্ব শাহে আলম। চালিয়ে গেছেন তার সংসার জীবন। এটাই ছিল তার একমাত্র জীবিকা।
চরফ্যাশন উপজেলার দুলারহাট থানাধীন নীলকমল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চর যমুনা গ্রামের আলী মুন্সি বাড়ির মৃত সৈয়দ মুন্সির ছোট ছেলে এ শাহে আলম।
তিনি জানান, মহান আল্লাহ শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর ওপর এ আসমানি কিতাব নাজিল করেছেন, যা মুসলমানদের জন্য পথপ্রদর্শক ও পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এ কোরআন শরিফ সহ বিভিন্ন বই, ফাইল ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র বাঁধাই করেই তিনি জীবিকা নির্বাহ করছেন দীর্ঘ বছর। এটাকে আল্লাহর নেয়ামত হিসেবে দেখেন তিনি। শাহে আলম বলেন, আল্লাহ আমাকে তৌফিক দান করেছেন বলেই আমি কোরআন শরিফ বাঁধাইয়ের কাজ করতে পারছি। এতে আল্লাহর বরকত ও রহমত রয়েছে। যুগ পরিবর্তন, প্রযুক্তিগত দাপট থাকা সত্বেও এই পেশার প্রতি তার নিষ্ঠা অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোরআন বাঁধাইয়ের জন্য তিনি বরমা, কাছি, সুই, সুতা, কাপড়, ছাপার কাগজ সহ নানা সরঞ্জাম ব্যবহার করেন। যা একত্রে ৩০০ টাকায় ক্রয় করেছেন। প্রতিটি কোরআন শরিফ বাঁধাই করতে ১০০ টাকা ফি নেন তিনি। তবে আকার ভেদে দাম কিছুটা কম-বেশি হয় বলে জানান শাহে আলম। বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরআন বাঁধাই করে দৈনিক ৩০০-৪০০ টাকা আয় করেন তিনি। এ সামান্য আয় দিয়েই তিনি পাঁচ সদস্যের সংসার চালাচ্ছেন।
জানা গেছে, বছরের পর বছর ধরে স্থানীয়রা প্রিয় ধর্মগ্রন্থ সহ নানা পুরোনো বই ফাইল নতুন করে বাঁধাই করতে নিয়ে আসেন তার কাছে। পরে তিনি অত্যন্ত যত্ন ও দক্ষতার সাথে প্রতিটি কাজ সম্পন্ন করেন। তার হাতে বাঁধাই করা কাজের গুণগতমান এবং সৌন্দর্য প্রশংসিত। যদিও এক সময় এই পেশায় ভালো আয় হত। বর্তমানে কাজের পরিমাণ অনেক কমেছে।
একদিকে ই-বুক ও আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশ, অন্যদিকে কাগজপত্রের চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় তার আয় অনেক কমেছে। তবুও তিনি পুরনো এই পেশা ছাড়েন নি। স্থানীয় লোকজন তাকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। তাদের মতে, বাঁধাইয়ের কাজের প্রতি তার নিষ্ঠা, সৃষ্টিশীলতার অবদান সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। চরফ্যাশন উপজেলায় এই বই বাঁধাই কারিগর প্রমাণ করেছেন আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই অর্থবহ হয়ে ওঠে। কোরআন শরিফ বাঁধাইয়ের মত একটি পবিত্র কাজ ধরে রেখে তিনি স্থানীয়দের জন্য হয়ে ওঠেছেন এক আলোকিত প্রতীক। শনিবার (২৬ আগস্ট) উপজেলার মানিকা ইউনিয়নের একটি বাড়িতে ষাটোর্ধ্ব শাহে আলমকে কোরআন শরিফ বাঁধাইয়ের কাজে ব্যস্ত দেখা যায়। সেখানে স্থানীয় গৃহবধূ মুনতাহা বলেন, চাচা খুব যত্ন সহকারে কোরআন শরিফ বাঁধাই করেন। এতে সময় লাগে, তবে কাজটিও ভালো হয়।
শাহে আলম জানান, সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে কোরআন শরিফ বাঁধাই করেন। কোনো দিন ৭-৮টি, আবার কোনো দিন কম কাজ পান। তবে এ আয় দিয়েই তিনি সংসারের খরচ চালাচ্ছেন। বর্তমানে বযসের ভারে নানা রোগ বাসা বেঁধেছে তার শরীরে। এখন আর আগের মতো বাড়ী বাড়ী গিয়ে কোরআন শরিফ বাঁধাই করতে পারে না। তার দাবি সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পেলে হয়তোবা তার জীবন বদলানো সম্ভব হতো।
এলাকাবাসীরা জানায়, সরকারের কোন সাহায্য সহযোগিতা পেলে কোরআন প্রেমী এই বৃদ্ধের ভাগ্য বদল সম্ভব। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে তাকে আরো আধুনিকায়ন করলে হয়তোবা কাজের মান আরো ভালো করা যেতো। আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব ও সরকারের অসহযোগিতার কারণে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ষাটোর্ধ্ব কারিগর শাহ আলম এগুতে পারছে না।
৪০ বছরের দীর্ঘ পথচলা, নানা প্রতিকুলতা ও আয়-রোজগারে সীমাবদ্ধতা সত্বেও শাহে আলম তার কাজের প্রতি এখনো একনিষ্ঠ। তার জীবন শুধু সংগ্রামের গল্প নয়, এটি একি অনুপ্রেরণার উদাহরণ।