1. diggilseba@gmail.com : admin :
  2. ashadul@barisalcrimetrace.com : Ashadul Islam : আসাদুল ইসলাম
  3. hafiz@barisalcrimetrace.com : barisal CrimeTrace : barisal CrimeTrace
  4. mahadi@barisalcrimetrace.com : মাহাদী হাসান : মাহাদী হাসান
উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় সাহসিকতার প্রতীক মাহেরীন চৌধুরী - Barisal Crime Trace । বরিশাল ক্রাইম ট্রেস
বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:০২ অপরাহ্ন

উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় সাহসিকতার প্রতীক মাহেরীন চৌধুরী

  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক// ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সোমবার (২১ জুলাই) ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরী আজ দেশের মানুষের চোখে এক সাহসিকতার প্রতীক। জীবন বাজি রেখে অন্তত ২০ শিক্ষার্থীর প্রাণ রক্ষা করা এই শিক্ষক নিজের দায়িত্ববোধ ও মমত্ববোধের যে অনন্য উদাহরণ রেখে গেছেন, তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে শিক্ষাঙ্গন ও সমাজজীবনের প্রতিটি স্তরে।

সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে ক্লাস চলাকালে মাইলস্টোন স্কুলের পাশের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। মুহূর্তেই আগুন ধরে যায় আশপাশে, সৃষ্টি হয় হাহাকার। তখনও নিজের দায়িত্বে অটল থেকে ছোট ছোট শিশু শিক্ষার্থীদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে সচেষ্ট হন মাহেরীন। একপর্যায়ে নিজেই আগুনে আটকে পড়েন তিনি। তার শরীরের শতভাগ দগ্ধ হয়। গুরুতর অবস্থায় নেওয়া হয় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে, যেখানে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেল ৪টায় নীলফামারীর জলঢাকা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চৌধুরীপাড়ার বগুলাগাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নেন হাজারো মানুষ—যারা শোকের পাশাপাশি গর্বে তাদের প্রিয় মেয়েকে বিদায় জানান।

মাহেরীন চৌধুরী ছিলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা ভার্সনের তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির কো-অর্ডিনেটর। তিনি শুধু একজন শিক্ষক ছিলেন না, ছিলেন শিক্ষানুরাগী, সমাজসেবী এবং একজন মানবিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব। জন্মগ্রহণ ও বড় হওয়া ঢাকায় হলেও তার শেকড় ছিল নীলফামারীর জলঢাকায়। মাত্র দুই মাস আগে তার পূর্বপুরুষদের প্রতিষ্ঠিত বগুলাগাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির দায়িত্ব নেন তিনি। এই প্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়নে তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি আধুনিক শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তোলার।

মাহেরীনের স্বামী মনছুর আলী হেলাল, যিনি একজন কম্পিউটার প্রকৌশলী, জানান—দুর্ঘটনার মুহূর্তে মাহেরীন অক্ষত ছিলেন। কিন্তু নিজের জীবনকে উপেক্ষা করে আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন। বেশ কয়েকজনকে নিরাপদে বের করে আনতে পারলেও এক পর্যায়ে বিস্ফোরণে তিনি মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন।

এই শিক্ষিকার আত্মত্যাগ পরিবার ও সহকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও আবেগাপ্লুত করেছে। এলাকাবাসী জানায়, মাহেরীন নিয়মিতভাবে গ্রামের মানুষের খোঁজখবর রাখতেন, দুঃসময়ে পাশে থাকতেন, দান-অনুদান দিতেন, এমনকি কালভার্ট নির্মাণ ও শিক্ষা উন্নয়নে নিজ উদ্যোগে কাজ করেছেন। শিক্ষানুরাগী হিসেবে এলাকায় তার সুপরিচিতি ছিল। তার চাচা রিকো চৌধুরী জানান, দুই বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় ছিলেন মাহেরীন এবং ছোটবেলা থেকেই মানবিক কাজে যুক্ত ছিলেন।

মাহেরীনের ভাই মুনাফ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের আপা ছিলেন আমাদের দ্বিতীয় অভিভাবক। মা-বাবা মারা যাওয়ার পর তিনিই আমাদের আগলে রেখেছিলেন। এখন আবার আমরা এতিম হয়ে গেলাম।’

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও প্রশাসনের সদস্যরাও মাহেরীনের আত্মত্যাগে শোকাহত। বগুলাগাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মহুবার রহমান বলেন, ‘তিনি শুধু আমাদের সভাপতি ছিলেন না, ছিলেন একজন স্বপ্নবান শিক্ষক, যিনি গ্রামের শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন চেয়েছিলেন। তার সেই স্বপ্ন আজ অসমাপ্তই থেকে গেল।’

মাহেরীন চৌধুরীর বিশ্ববিদ্যালয় সহপাঠী আলী আহমেদ মাবরুর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘তিনি ছিলেন সাদামাটা, উদার, দায়িত্বশীল ও সাহসী মানুষ। তিনি ছিলেন একজন মা, শিক্ষক এবং একজন বীর।’

মাহেরীনের আত্মত্যাগ শুধু তার পরিবার বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, পুরো জাতিকে নাড়া দিয়েছে। তার মৃত্যু যেমন গভীর শোকের, তেমনি দেশের জন্য এক গর্বিত অধ্যায়। এমন একজন সাহসী নারী শিক্ষক আমাদের সমাজে শিক্ষকদের ভূমিকা ও দায়িত্ববোধের নতুন মানদণ্ড তৈরি করে গেলেন।”

পোস্টটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আরও নিউজ
© All rights reserved © 2025 Barisal Crime Trace
Theme Customized By Engineer BD Network