
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরগুনার তালতলী উপজেলা সদরের পায়রা নদী তীরবর্তী ফকিরহাট, আশারচর, সোনাকাটা, জয়ালভাঙ্গা ও মরানিদ্রায় মৌসুম ভিত্তিক শুঁটকি উৎপাদনের পল্লীগুলোতে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত দেখা যায় ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য। মৌসুমের শুরুতেই বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার শ্রমিক কাজের খোঁজে এসব এলাকায় ভিড় করেন। শুঁটকি মৌসুমে এসব পল্লীতে জেলে, আড়ৎদার, মহাজন, পরিবহন শ্রমিকসহ প্রায় বারো থেকে পনেরো হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়।
শ্রমিকদের অভিযোগ, নারী ও কিশোরদের অপেক্ষাকৃত কম মজুরিতে কাজে লাগানো হয়। দৈনিক মজুরি নারী ও কিশোরদের জন্য তিনশ টাকা এবং প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের পাঁচশ টাকা পর্যন্ত নির্ধারিত হলেও মাছের সরবরাহ কম থাকায় অনেকেই দীর্ঘদিন বেতন পান না। কিশোর শ্রমিক রেজাউল করিম জানান, মাস তিনেক ধরে কাজ করেও এখন পর্যন্ত কোনো মজুরি পাননি। মৌসুমে বহু শ্রমিক পরিবারসহ খুপরি ঘর তৈরি করে পল্লীতেই বসবাস করেন।
ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, এ অঞ্চলে উৎপাদিত শুঁটকিতে কোনো প্রকার ওষুধ বা রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না। ফলে তালতলীর শুঁটকি দেশের বাজারের পাশাপাশি বিদেশেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা, সৈয়দপুর, জামালপুর, মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন ও দুবাইতে রপ্তানি হয় এসব শুঁটকি। স্থানীয়রা বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চার মাসে এক থেকে দেড় লাখ মণ শুঁটকি উৎপাদন সম্ভব।
তবে নাজুক অবকাঠামো ও নানাবিধ সমস্যায় শ্রমিকদের দুর্ভোগ বাড়ছে। পল্লীগুলোতে সুপেয় পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা নেই। নারী শ্রমিকরা নিরাপদ টয়লেটের অভাবে চরম অসুবিধায় পড়েন। তাছাড়া যোগাযোগব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় জরুরি রোগী হাসপাতালে নিতে ভাড়া বাবদ অতিরিক্ত খরচ গুনতে হয়। ব্যবসায়ীরাও পরিবহন ব্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন।
৩০ বছরের অভিজ্ঞ শুঁটকি ব্যবসায়ী দুলাল হাওলাদার বলেন, “প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায়ই লোকসান গুনতে হয়। আর যোগাযোগব্যবস্থার কারণে ট্রাকভাড়া অতিরিক্ত দিতে হয়।”
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেবক মন্ডল বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় বেশকয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা শ্রমিকদের কল্যাণে নানাবিধ কাজ করছে।তাদের সুবিধার্থে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ এবং টিউবওয়েল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়নেও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, দেশে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৩ হাজার ৩৮ টন শুঁটকি রপ্তানি হয়ে ৭৬ কোটি টাকার বেশি আয় হয়েছে। বরগুনার তালতলী এই খাতের সম্ভাবনাময় অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত।
স্থানীয়দের মতে, সরকার সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিলে তালতলীর শুঁটকি শিল্প আরও অধিক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বয়ে আনতে সক্ষম।