
এস এম আলমগীর হোসেন, কলাপাড়াঃ পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর কর্তৃক বেড়িবাঁধ প্রশস্ত করে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের ফলে উচ্ছেদের শঙ্কায় থাকা জিয়া কলোনীসহ ভূমিহীন ১৩৬টি পরিবারের যথাযথ পুনর্বাসন এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরাফাত কনস্ট্রাকশনের হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে কলাপাড়া প্রেসক্লাব চত্বরে এ মানববন্ধন হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা জানান, উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত খাস জমিতে স্থানান্তরিত প্রথম পর্যায়ের ২২টি পরিবার ছয় মাস ধরে বসবাস করলেও এখনো সেখানে টিউবওয়েল, বিদ্যুৎ সংযোগ, চলাচলের রাস্তা ও পানি নিষ্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরি করা হয়নি। অন্যদিকে বাকি পরিবারগুলোর জন্য আন্দারমানিক নদীর তীর ঘেঁষে নদীর অংশ ভরাট করে পুনর্বাসনস্থল নির্ধারণ করা হয়েছে-যা বসবাসের অনুপযোগী ও ঝুঁকিপূর্ণ।
বক্তারা অভিযোগ করেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন পরিবারগুলোকে জোরপূর্বক বাড়িঘর সরাতে চাপ দিচ্ছে। অবিলম্বে প্রথম পর্যায়ের ২২টি পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত করা এবং অন্যদের জন্য নদী থেকে নিরাপদ দূরত্বে পুনর্বাসনের দাবি জানান তারা।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সদস্য মো. ফোরকান হাওলাদার, মো. ইব্রাহিম শিকারী, লাইলী বেগম, কবির হোসেন, জসিম প্যাদা, সালেহা বেগম ও আল-আমিন খান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রতিবেশ ও উন্নয়ন ফোরাম-পটুয়াখালীর সদস্য সচিব মো. নজরুল ইসলাম।
সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন কলাপাড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি নেছারউদ্দিন আহমেদ টিপু সাধারণ সম্পাদক অমল মুখার্জি এবং পরিবেশ ও জনসুরক্ষা মঞ্চের সদস্য সচিব মনোয়ারা বেগম।
ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে ইব্রাহিম শিকারী বলেন, “২০০৪ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের ঢালে আমাদের বসবাসের সুযোগ দেওয়া হয়। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে নানা দুর্যোগ মোকাবিলা করে আমরা এখানে বসবাস করছি। এখন নদীর ভরাট করা স্থানে আমাদের সরতে বলা হচ্ছে-যা ঝুঁকিপূর্ণ। ইউনিয়নের খাস জমি প্রভাবশালীদের দখলে, অথচ ভূমিহীনদের জন্য নিরাপদ জমি নেই।
মো. ফোরকান হাওলাদার বলেন, রাস্তা নির্মাণে ১৩৬টি পরিবার উচ্ছেদ হবে, কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে বসবাস করায় তারা কোনো ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসনের আওতায় পড়ছে না। “বন্দরের জমি অধিগ্রহণে ৩ হাজারের বেশি পরিবার পুনর্বাসন পাচ্ছে, কিন্তু আমরা ভূমিহীন হওয়ায় বঞ্চিত হচ্ছি,” বলেন তিনি। “আমরা শুধু মাথা গোঁজার ঠাঁই চাই।
বক্তারা আরও বলেন, পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল থেকে ঢাকা–কুয়াকাটা আঞ্চলিক সড়কে যুক্ত হওয়ার জন্য ইতোমধ্যে চার লেনের সেতু ও ছয় লেনের সংযোগ সড়ক নির্মাণ চলছে। সেখানে নতুন করে বেড়িবাঁধ কেটে দুই লেনের বিকল্প রাস্তা নির্মাণ অপ্রয়োজনীয়। শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুটি ভারী যানবাহনের জন্য উপযোগী নয়। ফলে নতুন রাস্তা বরং অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের ঝুঁকি বাড়াবে।
তারা অভিযোগ করেন, নদীতীরবর্তী রেকর্ডীয় জমি, খাস জমি এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন জমির ব্যবহার নিশ্চিত করতে এ রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে কিনা-সে বিষয়েও প্রশ্ন রয়েছে। “বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সুবিধার জন্য পায়রা বন্দরকে ব্যবহার করে আমাদের উচ্ছেদের চেষ্টা চলছে,” দাবি বক্তাদের।