
নিজস্ব প্রতিবেদক : জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার রায় আগামীকাল সোমবার (১৭ নভেম্বর) ঘোষণা করা হবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ রায় ঘোষণা করবেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) রায় সরাসরি সম্প্রচার করবে। এছাড়া একটি বিদেশি বার্তাসংস্থাও সরাসরি সম্প্রচারের অনুমতি চেয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, শেখ হাসিনা ও তার সহ-আসামি আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে। তারা উভয়ের জন্য মৃত্যুদণ্ডের দাবি করেছেন। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আদালতের কাছে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে আবেদন করেছি।’
গত বছর আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় প্রথম মামলাটি করা হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল এ মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
প্রথমে এ মামলায় শেখ হাসিনাই একমাত্র আসামি ছিলেন। পরে চলতি বছরের ১৬ মার্চ সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এবং আসাদুজ্জামান খান কামালকে অতিরিক্ত আসামি করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষ মামলায় মোট পাঁচটি অভিযোগ এনেছে। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের বিষয়বস্তু ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার রয়েছে।
প্রথম অভিযোগ: গত বছরের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ও ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ চালায়। এতে দেড় হাজার মানুষ নিহত ও প্রায় ২৫ হাজার আহত হন।
দ্বিতীয় অভিযোগ: হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন বাহিনীর মাধ্যমে সেই নির্দেশ কার্যকর করেন।
তৃতীয় অভিযোগ: রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ।
চতুর্থ অভিযোগ: রাজধানীর চানখাঁরপুলে আন্দোলনরত নিরীহ ছয়জনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ।
পঞ্চম অভিযোগ: আশুলিয়ায় নিরীহ ছয়জনকে হত্যা ও আগুনে পোড়ানোর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ।
এক পর্যায়ে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তার আবেদন মঞ্জুর করেন এবং পরবর্তীতে তিনি এই মামলার রাজসাক্ষী হয়ে সাক্ষ্য দেন।
গত ২৩ অক্টোবর মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সমাপনী বক্তব্য দেন। তিনি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রার্থনা করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. আমির হোসেন আসামিদের খালাস চান।