1. diggilseba@gmail.com : admin :
  2. ashadul@barisalcrimetrace.com : Ashadul Islam : আসাদুল ইসলাম
  3. hafiz@barisalcrimetrace.com : barisal CrimeTrace : barisal CrimeTrace
  4. mahadi@barisalcrimetrace.com : মাহাদী হাসান : মাহাদী হাসান
আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ ঐতিহ্যের শেষ সাক্ষী ধান ভানা ঢেঁকি - Barisal Crime Trace । বরিশাল ক্রাইম ট্রেস
বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৫৬ অপরাহ্ন

আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ ঐতিহ্যের শেষ সাক্ষী ধান ভানা ঢেঁকি

  • আপডেট সময় : সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫

ডেস্ক সংবাদ : যন্ত্রসভ্যতার দ্রুত অগ্রগতির ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার গ্রামীণ জীবনের এক চিরচেনা উপকরণ ঢেঁকি। একসময় প্রতিটি গ্রামে ধান ভানার প্রধান উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এখন এটি শুধুই স্মৃতি। নবান্ন থেকে সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার সবকিছুর সঙ্গে জড়ানো ছিল ঢেঁকি। কিন্তু সময়ের স্রোত, মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন এবং প্রযুক্তির দাপটে আজ ঢেঁকি খুঁজে পাওয়া যায় না।

 

 

চুয়াডাঙ্গা জেলার সীমান্তঘেঁষা দর্শনা থানার অন্তর্গত গ্রামাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, পুরোনো খোপের ঘরে ছাউনি পড়া, মাটিতে পড়ে থাকা, কিংবা মাটির নিচে অর্ধেক ঢেকে থাকা ভাঙা ঢেঁকি। যা এখন শুধুই অতীতের স্মারক।

 

 

দর্শনার আজমপুর মহল্লার ৭০ বছর বয়সি সয়েরা বেগমের স্মৃতিতে এখনো ভেসে ওঠে ঢেঁকির আওয়াজ। তিনি বলেন, আমরা ছোট থাকতে মা-খালা মিলে ভোরে উঠে ঢেঁকিতে ধান ভানতাম। সেই শব্দে গ্রামের সকাল শুরু হতো। এখন তো মেশিনের শব্দে মানুষ নিজের কথা পর্যন্ত শোনে না। ঢেঁকি চালাইনি বহু বছর।

 

 

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, নতুন প্রজন্ম ঢেঁকির নাম জানে ঠিকই, কিন্তু বাস্তবে কখনো দেখেনি। সেই সঙ্গে ঢেঁকি চালাতে যে দক্ষতা, ছন্দ ও কৌশল লাগত তাও বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

 

 

‘ও ধান ভানো রে, ঢেঁকিতে পার দিয়া, ঢেঁকি নাচে আমি নাচি হেলিয়া দুলিয়া…।’ ঢেঁকির পাড়ে গ্রামীণ নারীদের এমন গান বাংলার পল্লি জনপদে সবার মুখে মুখে থাকত। ধান থেকে চাল, তা থেকে আটা। একসময়ে চাল আর আটা তৈরির একমাত্র মাধ্যম ছিল ঢেঁকি। নবান্ন এলেই ঢেঁকির পাড়ে ধুম পড়ত নতুন ধানের চাল ও আটা তৈরির। আর শীতের পিঠা তৈরি চলত গ্রামের প্রায় সব বাড়িতে। ঢেঁকির পাড়ের শব্দেই বোঝা যেত কার বাড়িতে পিঠা তৈরি হচ্ছে।

 

 

আধুনিক রাইস মিল, কল-কারখানা, ধান ভাঙার মেশিন ঢেঁকিকে অপ্রয়োজনীয় করে দিয়েছে। ভালো মানের কাঠ পাওয়া কঠিন হওয়ায় ঢেঁকি তৈরি করাও এখন ব্যয়বহুল। ঢেঁকি চালানো কঠিন ও সময়সাপেক্ষ হওয়ায় গৃহিণীরা স্বাভাবিকভাবে সহজ প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকেছেন। ঢেঁকিতে ভানা চালের স্বাদ আলাদা ছিল। ভাত ছিল ঝরঝরে, পিঠার গন্ধ ছিল অন্যরকম। মেশিনের চাল সেই স্বাদ দেয় না। ঢেঁকিতে ভানার সময় চালের বাইরের পুষ্টিকর আবরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। তাই ঢেঁকির চাল বেশি স্বাস্থ্যকর। ঢেঁকিতে ধান ভানার সাথে যুক্ত ছিল অনেক সামাজিক রীতি, নবান্ন উৎসব, গৃহস্থালির আড্ডা, বৌ-ঝিদের গান। ঢেঁকির ছন্দে মিলেমিশে থাকত পারিবারিক উষ্ণতা।

 

 

ঢেঁকি বড় ও শক্ত কাঠের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি করা হয়। অন্তত ছয় ফুট লম্বা। এর অগ্রভাগের মাথার কাছাকাছি দেড় ফুট লম্বা মনাই। মনাইয়ের মাথায় পরানো থাকে লোহার রিং। আঞ্চলিক ভাষায় ‘চুরন’ বা ‘মুশাল’ বলা হয়। চুরন বারবার যেখানে আঘাত করে নিচের সেই অংশটুকুর নাম ‘গর’। এলাকা বিশেষে ‘নোট’ বা ‘লুড্ডা’ বলা হয়। মাটির ভেতরে গর্ত করে নীচে একটি শক্ত পাথর বসানো হয়, যাতে ঢেঁকির ক্রমাগত পাড়ে সেটি ভেঙে না যায়। গর্তটি মাটি দিয়ে ভালোভাবে লেপে শুকিয়ে রাখা হয়। তবে অনেকে এই গর্তটি সিমেন্টের প্রলেপ দিয়েও ব্যবহার করেন। ঢেঁকিতে ধান বা চাল মাড়াই করতে কমপক্ষে তিনজন মানুষের প্রয়োজন হয়। পেছনের লেজবিশিষ্ট চ্যাপটা অংশে এক বা দুজন পা দিয়ে তালে তালে চাপ দিলে মনাই সজোরে গরের ভেতর ধান বা চালের ওপর আঘাত করে। তবে মনাই ওঠানামার ছান্দসিক তালে তালে আরও একজন নারী মাড়াই করতে সাহায্য করে। তাকে বলে ‘আলি’ দেওয়া। তবে ঢেঁকিতে ‘পাড়’ দেওয়া আর ‘আলি’ দেওয়ার মধ্যে সঠিক সমন্বয় না থাকলে ঘটতে পারে ছন্দপতন। ঘটতে পারে দুর্ঘটনাও। যারা ঢেঁকিতে পাড় দেয় তাদের বলা হয় ‘পাড়ানি’। আর যারা আলি দেয় তাদের বলা হয় ‘আলানি’।

 

 

মানুষের পরিশ্রম, গ্রামের ঐতিহ্য, নারীর অবদান, পারিবারিক বন্ধন সবকিছুর প্রতীক ছিল ঢেঁকি। কালের বিবর্তনে আজ এটি বিলুপ্তির পথে। কিন্তু যাদের জীবনে ঢেঁকির ব্যবহার ছিল তাদের কাছে ঢেঁকি এখনো এক জীবন্ত স্মৃতি।

পোস্টটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আরও নিউজ
© All rights reserved © 2025 Barisal Crime Trace
Theme Customized By Engineer BD Network