
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল// স্বাস্থ্যখাতের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়াসহ ৩ দফা দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক সাড়ে ৫ ঘণ্টা অবরোধ শেষে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে ২৪ ঘণ্টার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বরিশালের ছাত্রজনতা।
রোববার (১০ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় বাসটামির্নাল নথুল্লাবাদের সামনের মহাসড়কে অবরোধ করে তারা। এরপর তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন ডেকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সশরীরে এসে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে তদন্ত শেষে তার পক্ষ থেকে তিন দফা দাবির স্বপক্ষে সুস্পষ্ট আশ্বাসের দাবি জানায়। এর আগে একাত্মতা প্রকাশ করে আন্দোলনে যোগ দেন ইসলামী আন্দোলন ও এনসিপির নেতাকর্মীরা। অবরোধের প্রভাবে ঢাকাসহ সারাদেশের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। হাজার হাজার যাত্রী বাসে আটকে চরম দুর্ভোগে পড়েন।
সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীরা বলেন, বরিশালের শের ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের রোগীরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগে রয়েছে। এছাড়াও সারাদেশের সব সরকারি হাসপাতালে অবকাঠামোগত উন্নয়ন দরকার। নাগরিকদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে সরকারি হাসপাতালগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ দেশের সব হাসপাতালে দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি, দলীয় লেজুড়বৃত্তিক চিকিৎসকদের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, ডিজিটাল অটোমেশন ও স্বচ্ছ জবাবদিহিমূলক টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনকে জনগণের ভোগান্তির বিষয় শুনে তদন্ত সাপেক্ষে আবার সুপারিশ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে জোরদার পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করলেও ঊর্ধ্বতনরা কোনো কর্ণপাত করছে না। তাই স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে সশরীরে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বরিশাল শের ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে এসে অনিয়ম দুর্নীতির তদন্ত করে দ্রুত সংস্কারে সুস্পষ্ট আশ্বাস দিতে হবে।
এদিকে মহাসড়ক অবরোধের কারণে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বরিশালের কিছু অংশসহ পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী এবং পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার সবরকম যানবাহন চলাচল রয়েছে বন্ধ হয়ে যায়।
অবরোধে আটকে থাকা বরগুনার যাত্রী আবদুর রহমান বলেন, প্রচণ্ড গরমে গাড়িতে বসে থাকতে খুবই কষ্ট হয়। এভাবে রাস্তা আটকে জনগণের ভোগান্তির কোনো অর্থ নেই। মহাসড়ক ছেড়ে অন্যকোনো স্থানে এই আন্দোলন করে দাবি আদায়ের আহ্বান জানান তিনি। নারী যাত্রী বৃদ্ধ জয়নব বিবি বলেন, বহুদূর থেকে নির্বিঘ্নে বরিশাল এসেছি। কিন্তু বাড়ির ৫০ কিলোমিটার দূরে অবরোধে আটকে চরম ভোগান্তিতে পরেছি।
মহাসড়ক আটকে জনভোগান্তি সৃষ্টি না করে জনদুর্ভোগহীন কর্মসূচি করা যেত কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে আন্দোলনের সংগঠক মহিউদ্দিন রনি বলেন, তিন দফা দাবিতে দুই সপ্তাহ ধরে টানা আন্দোলন করছি। প্রথম দিকে আমরা অশ্বিনী কুমার হল, শেবাচিম হাসপাতালের সামনে বিভিন্ন কর্মসূচি করেছি। কিন্তু আমাদের আন্দোলনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। তাই আমরা বরিশালবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে মহাসড়কে নেমেছি। আমরা এই দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখব।
বরিশাল এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন সিকদার বলেন, তিন দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা আজও মহাসড়ক অবরোধ করেছিল। বর্তমানে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ দিন ধরে সারাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে অব্যবস্থাপনা, রোগীদের হয়রানি ও স্বাস্থ্যখাতের সিন্ডিকেট ভাঙার তিন দফা দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। এই দাবিতে গত শনিবার ছাত্রজনতা ও বাসশ্রমিকরা মুখোমুখি অবস্থানে গেলে ছাত্রজনতা আড়াই ঘণ্টা ও বাসশ্রমিকরা দেড়ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে। এছাড়া শুক্রবার সাত ঘণ্টা, বৃহস্পতিবার আড়াই ঘণ্টা নথুল্লাবাদ বাসটার্মিনালের সামনের মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্রজনতা।