1. diggilseba@gmail.com : admin :
  2. ashadul@barisalcrimetrace.com : Ashadul Islam : আসাদুল ইসলাম
  3. hafiz@barisalcrimetrace.com : barisal CrimeTrace : barisal CrimeTrace
  4. mahadi@barisalcrimetrace.com : মাহাদী হাসান : মাহাদী হাসান
শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য গঠনে মা-বাবার ভূমিকা - Barisal Crime Trace । বরিশাল ক্রাইম ট্রেস
বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৫৬ অপরাহ্ন

শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য গঠনে মা-বাবার ভূমিকা

  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫

স্বাস্থ্য ডেস্ক: স্বাস্থ্য সাধারণত দুটি ভাগে বিভক্ত: শারীরিক স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্য। মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ শুরু হয়। এ সময় মায়ের শরীরচর্চা ও মানসিক প্রশান্তি শিশুর সামগ্রিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।

জন্মের পর সন্তানের শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে মা-বাবা যেমন সচেতন থাকেন, মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশের দিকটি তেমন গুরুত্ব পান না। অথচ উন্নত জাতি গঠনে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব শারীরিক স্বাস্থ্যের চেয়েও অধিক। আর এই মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশের ভিত্তি গড়ে ওঠে মূলত পরিবারের পরিবেশ ও মা-বাবার আচরণের মাধ্যমে।

একটি দম্পতি যত দূরদর্শী ও সচেতন হবেন, তাদের সন্তানও তত বেশি সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। সাধারণত মা-বাবারা সন্তানের খাবার, পোশাক বা চিকিৎসার ব্যাপারে যত্নশীল থাকেন, কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই তারা উদাসীন থাকেন। অথচ মানসিক বিকাশ ব্যাহত হলে সন্তান পরবর্তীতে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে উঠতে পারে। তাই শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও সমান মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

প্রবল কৌতূহল ও অনুসন্ধিৎসা নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুকে আমরা প্রায়ই অবুঝ বলে হেলা করি—শুধু তার অনভিজ্ঞতা ও প্রকাশ অক্ষমতার কারণে। শিশুর শারীরিক ভারসাম্য অর্জনে কিছুটা সময় লাগলেও মানসিক স্বাস্থ্যের ভিত্তি এর মধ্যেই তৈরি হতে থাকে।

শিশু মন এক স্বচ্ছ আলোকচিত্রগ্রাহী যন্ত্রের মতো, যার মাধ্যমে সে প্রিয় মানুষদের ও আশপাশের পরিবেশের ছাপ স্থায়ীভাবে নিজের মনে আঁকিয়ে নেয়। এ অভিজ্ঞতাই তার ভবিষ্যৎ মানসিক স্বাস্থ্য গঠনে গভীর প্রভাব ফেলে।

শিশু প্রথমে মায়ের, পরে বাবার, তারপর পরিবারের অন্যান্য সদস্য, শিক্ষক ও সহপাঠীদের সংস্পর্শে আসে। এদের আচরণ, কথাবার্তা ও ব্যবহার থেকেই শিশুর মানসিক বিকাশের ভিত্তি তৈরি হয়।

যখন শিশু প্রথম কথা বলা শুরু করে, জিজ্ঞেস করে, ‘এটা কী? ওটা কী?’ তখন অনেক মা-বাবা বা অভিভাবক বিরক্ত হয়ে ধমক দেন। এতে শিশুর কৌতূহল ও জানার আগ্রহ স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে, যা তার মানসিক বিকাশে গুরুতর বাধা সৃষ্টি করে।

শৈশবে পরিবারের পরিবেশ যদি সহনশীল, ভালোবাসাপূর্ণ ও সংযত হয়, তবে সেই শিশুই ভবিষ্যতে পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠতে পারে। সে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র—সব ক্ষেত্রেই ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়।

শহুরে বা গ্রামীণ জীবন, যেখানেই হোক, ‘শৃঙ্খলাই জীবন’- এই প্রবাদটি মনে রেখে সন্তান পালনে অভিভাবকদের সংযমী ও দায়িত্বশীল হতে হবে।

শিশুর সামনে কোনোভাবেই হিংসা, প্রতিশোধ, ঝগড়া বা নেতিবাচক আচরণ প্রদর্শন করা উচিত নয়। সন্দেহপ্রবণ বা কলহপ্রবণ পরিবারের শিশুরা কখনোই সুস্থ মানসিক বিকাশ অর্জন করতে পারে না।

অনেক সময় মা-বাবার অজ্ঞতা বা অসাবধানতার কারণেই শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাহত হয়। যেমন, ডাক্তার যদি বলেন, শিশুকে ঠান্ডার জন্য আইসক্রিম খেতে দেওয়া যাবে না, কিন্তু মা শিশুর আবদার মেনে আইসক্রিম দিয়ে বলেন, ‘বাবাকে বলো না, বকা দেবেন।’

কিংবা বাবা কোনো কিছু কিনে দিয়ে বলেন, ‘মাকে বলো না।’ এমন আচরণ শিশুকে অজান্তেই মিথ্যাশ্রয়ী করে তোলে। বিষয়টি সামান্য মনে হলেও এর প্রভাব গভীর, এতে শিশুর চরিত্র ও মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

এমনকি অনেক মা শিশুর সামনে বাবার পকেট বা মানিব্যাগ থেকে টাকা নেন, যা শিশুর মনে ভুল ধারণা জন্ম দেয়। শিশুর সামনে বড়দের সর্বদা সংযত ও সততার উদাহরণ রাখতে হবে। যে পরিবারে মা-বাবার ঝগড়া, মারামারি বা হাতাহাতি নিত্যনৈমিত্তিক, সে পরিবারের শিশুর মানসিক বিকাশে তার কুপ্রভাব পড়বেই।

তেরো বছর বয়সে বাবাকে হারানো আদিব, যার মা ছিলেন কলেজের প্রভাষক, পরবর্তীতে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে এবং মায়ের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন হয়। কারণ, শৈশবে মায়ের আচরণে ছিল নেতিবাচকতা।

অন্যদিকে নাদিয়া, এক মধ্যবিত্ত শিক্ষিত পরিবারের মেয়ে, শহরের সুযোগ-সুবিধা পেতেও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়। কারণ তার বাবা-মায়ের কলহপূর্ণ দাম্পত্য জীবন। এক ভাই যখন সরকারি কর্মকর্তা, অন্য ভাই তখন হয়ে ওঠে সন্ত্রাসী। এমন উদাহরণ সমাজে কম নয়। এর মূল কারণ, শিশুকালে সুস্থ মানসিক বিকাশের ঘাটতি।

শিশুর প্রতি পিতামাতার উদাসীনতা বা মাত্রাতিরিক্ত আবেগপ্রবণতা—উভয়ই শিশুকে বিপথে নিতে পারে। তাই সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। শারীরিক বিকাশের মতোই, এমনকি তার চেয়েও বেশি মনোযোগ দিতে হবে মানসিক বিকাশের প্রতি।

পোস্টটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আরও নিউজ
© All rights reserved © 2025 Barisal Crime Trace
Theme Customized By Engineer BD Network