
নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গোপসাগরের তীরঘেঁষা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার সম্ভাবনা নিয়ে বরগুনায় পর্যটনশিল্পের নতুন দ্বার উন্মোচন হতে পারে। ঢেউয়ের গর্জন, সবুজ বনের শীতল পরশ, চরাঞ্চলের অপরূপ নৈসর্গ আর বিচিত্র বন্যপ্রাণীর সমাহার, সব মিলিয়ে এই জেলার প্রাকৃতিক রূপ যে কাউকে মুহূর্তেই মুগ্ধ করতে পারে। একই স্থানে প্রকৃতির বাহারি রূপের এমন সমারোহ দেশের অন্য কোথাও খুব কমই দেখা যায়।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয় ঘটাতে পারলে বরগুনা হতে পারে দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় ইকো-ট্যুরিজম স্পট। তালতলী উপজেলার আশারচর, সোনাকাটা ও টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চল, পাথরঘাটার লালদিয়া ও হরিণঘাটা, বরগুনা সদরের সোনাতলা বনঘেরা অঞ্চল, সব মিলিয়ে গড়ে উঠতে পারে পর্যটনশিল্পের বিস্তৃত ক্ষেত্র।
তালতলী থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত বিস্তৃত টেংরাগিরি বনাঞ্চলের আয়তন ১৩ হাজার ৬৪৪ একর। তিনদিক ঘেরা বঙ্গোপসাগর ও বিভিন্ন খালবেষ্টনী এলাকার এই বন ২০১০ সালে ঘোষণা করা হয় বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে। এখানে রয়েছে চিত্রল হরিণ, শূকর, অজগর, বিভিন্ন প্রজাতির বানর, কুমিরসহ অসংখ্য বন্যপ্রাণী। সারি সারি গেওয়া, কেওড়া, সুন্দরী, তাম্বুলকাটাসহ দেশীয় প্রাকৃতিক বৃক্ষরাজিতে জীববৈচিত্র্যের প্রাচুর্য চোখে পড়ে। এ ছাড়া শতবর্ষী রাখাইন জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও জীবনযাপন পর্যটকদের কাছে বাড়তি আকর্ষণ যোগ করে।
টেংরাগিরির পাশেই সোনাকাটা। বিশাল সৈকত, সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আর সবুজের ভিন্ন আবেশ এখানে পর্যটকদের টানে। সামুদ্রিক হাওয়া আর শান্ত পরিবেশ ভ্রমণপিপাসুদের মাঝে এনে দেয় ভিন্নরকম প্রশান্তি।
পাথরঘাটার হরিণঘাটা বনে যেকোনো সময় দেখা মিলতে পারে দলে দলে ছুটে চলা চিত্রল হরিণের। পাশাপাশি বানর, শজারু, শৃগালসহ অনেক বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ রয়েছে এখানে। তিন নদীর সঙ্গমস্থল হওয়ায় আলাদা করে গড়ে উঠেছে লালদিয়া, পদ্মা ও লাঠিমারা সৈকত, যা পর্যটকদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ।
অন্যদিকে বিষখালী-পায়রা-বলেশ্বর নদীর সংযোগে গঠিত সোনাতলা-কুমিরমারা বনাঞ্চলও প্রাকৃতিক নৈসর্গের আরেক লীলাভূমি। ৪ হাজার ৬০০ একরের এই বনে রয়েছে পিকনিক স্পট, গোলঘর, ডাকবাংলোসহ পর্যটনবান্ধব সুযোগ-সুবিধা। পদ্মার চর এলাকাও ধীরে ধীরে পর্যটকদের আগ্রহের স্থান হয়ে উঠছে।
পর্যটন উন্নয়নে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, নিরাপত্তা জোরদার ও প্রচারণা বৃদ্ধি জরুরি। পাশাপাশি স্থানীয় উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে হবে। ব্যক্তি মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত সুরঞ্জনা ইকো রিসোর্টের মতো উদ্যোগ ইতোমধ্যে ভ্রমণকারীদের আকর্ষণ করছে এবং পর্যটনে বিনিয়োগের নতুন উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে।
যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ ও কার্যকর পদক্ষেপ নিলে বরগুনা দেশের ইকো-ট্যুরিজমের নতুন কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে। সমৃদ্ধ করবে স্থানীয় অর্থনীতি, কর্মসংস্থান ও জাতীয় পর্যটনের মানচিত্র।