এলসিডি-এলইডির জায়গা নিচ্ছে স্মার্ট টিভি


Barisal Crime Trace -FF প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৩, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ /
এলসিডি-এলইডির জায়গা নিচ্ছে স্মার্ট টিভি

অনলাইন ডেস্ক : দেশে সাদাকালো টেলিভিশন বা টিভির যাত্রা শুরু হয় সিআরটি (ক্যাথোড রে টিউব) সংস্করণের মাধ্যমে। এরপর সে বাজার নিয়ে নেয় রঙিন সিআরটি টিভি। পরবর্তীসময়ে বড় বাক্সের মতো সেসব টিভির পরিবর্তে আসে লাইট এমিটিং ডায়োড-এলইডি টিভি। সে সংস্করণেরও জায়গা কিছুদিন পরে নিয়ে নেয় লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে বা এলসিডি টিভি। এখন সে জায়গা দখল করছে স্মার্ট টিভির নানান সংস্করণ। এরমধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের স্মার্ট টিভিগুলো।

ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, স্মার্ট টেলিভিশন দিয়ে ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের সুবিধাসহ প্রায় সব স্মার্ট ডিভাইসের সুবিধা পাওয়া যায়। এতে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের সুযোগও থাকে। স্কাইপে, টুইটার, ফেসবুক, ইউটিউব ব্যবহার করা যায়। ইনস্টল করা যায় নেটফ্লিক্স ছাড়াও প্রায় সব ওটিটি প্ল্যাটফর্মের অ্যাপ। ওয়াই-ফাই সংযোগ দিয়েই চলার কারণে থাকে না ডিশ লাইনের ভোগান্তি। ঘরের সব ডিভাইসের বিনোদন পুরোপুরি দিতে সক্ষম একটি স্মার্ট টিভি।

আবার বিনোদন ছাড়াও এসব টিভি এখন ব্যবহার করা হচ্ছে বৃহৎ পরিসরে শিক্ষামূলক ও পেশাগত বিভিন্ন কাজে। এর মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত, অন্যান্য যন্ত্রাংশ পরিচালনাও হচ্ছে। সব মিলে এখন স্মার্ট টিভির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে।

পল্টনে কথা হয় ইলেক্ট্রোমার্টের সেলস ম্যানেজার শাহজাহান কবিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, মোবাইল কোম্পানিগুলো যেমন প্রতিনিয়ত নিজেদের মডেল আপডেট রেখে গ্রাহক আকর্ষণের চেষ্টা করে, ঠিক সেভাবে এখন স্মার্ট টিভিগুলো নিজেদের আপডেট রাখছে। সেজন্য এর চাহিদা বাড়ছে। কমে গেছে বেসিক এলইডি-এলসিডির বাজার। এমনকি বিদেশি অনেক ব্র্যান্ড এখন সেসব টিভি বিক্রি বন্ধ করছে। অনেকেরই এখন শতভাগ বাজারে স্মার্ট টিভি।

তিনি বলেন, ইন্টারনেট সুবিধাযুক্ত টিভিতে ভিডিও দেখার সুবিধা থাকায় বেশির ভাগ মানুষ এখন স্মার্ট টিভি কিনছেন। আবার প্রতিটি বাড়িতে এখন ইন্টারনেট রয়েছে। ফলে স্মার্ট টিভির জন্য বাড়তি কোনো ডিশ বিলের খরচ হচ্ছে না। আবার মোবাইলের ডাটা দিয়েও এটি চালানো যায়।

টিভি আমদানি ও সংযোজন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৯৯৫ সালের পর থেকে সাদাকালো টেলিভিশন সংযোজনের মাধ্যমে দেশে গড়ে ওঠে টেলিভিশন সংযোজন শিল্প। শুরুতে সাদাকালো ও রঙিন সিআরটি টিভির বাজার দেশি প্রতিষ্ঠানের দখলে ছিল। সে সময় ন্যাশনাল টিভি, নিপ্পন ইন্ডাস্ট্রি, তানিম টিভির মতো ব্র্যান্ডগুলো বাজারে নেতৃত্ব দিয়েছে। এরপর এলইডি-এলসিডি সংস্করণ বাজারে এলে দেশি কোম্পানিগুলো বাজার হারাতে থাকে। একে একে বন্ধ হয়ে যায় দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো। ২০১০ সালের দিকে প্রায় ৮০ শতাংশ বাজার চলে যায় বিদেশি ব্র্যান্ড ও আমদানিকারক সংযোজনকারী নানান প্রতিষ্ঠানের দখলে।

তবে এরপরের গল্প কিছুটা ভিন্ন। পরবর্তী কয়েক বছরে বাংলাদেশি বড় বড় কিছু কোম্পানি টিভির বাজারে প্রবেশ করে। শেষ দশ বছরে দেশে টেলিভিশন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। এতে আবার ধীরে ধীরে টেলিভিশনের আমদানিনির্ভরতা কমছে। দেশে টিভি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে যুক্ত উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ভিশন, ওয়ালটন, র‌্যাংগস, ইলেকট্রোমার্ট, সিঙ্গার বাংলাদেশ, ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকস, সনি, ইলেক্ট্রা ইন্টারন্যাশনাল, মিনিস্টার, এসকোয়্যার ইলেকট্রনিকস, এলজি প্রভৃতি। স্থানীয় কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি এখন সিঙ্গারসহ বিদেশি একাধিক কোম্পানি এ দেশে কারখানা স্থাপন করেছে।

এতে এখন টিভির বাজারের প্রায় অর্ধেক দখল করেছে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো। দেশীয় কোম্পানির তৈরি ব্র্যান্ডের বাজার শেয়ার ৪০ শতাংশ এবং সংযোজনকারী দেশি ব্র্যান্ডের শেয়ার ৬০ শতাংশ।

জানতে চাইলে র‌্যাংগস ইলেক্ট্রনিকসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর একরাম হোসেন বলেন, টেলিভিশনের বাজার বর্তমানে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। দ্রুত এ বাজার বাড়ছে। বার্ষিক প্রবৃদ্ধি এখন ১৮ থেকে ২০ শতাংশ। আর এখন যেসব টিভি বিক্রি হচ্ছে এরমধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি স্মার্ট টিভি। তিনি বলেন, টেলিভিশনে নতুন নতুন টেকনোলজি এসেছে। মানুষের ক্রমক্ষমতা বৃদ্ধি, সারাদেশে সহজলভ্য ইন্টারনেট থাকায় এ বাজার বাড়ছে।

অন্যদিকে টেলিভিশন আমদানিকারকদের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৪ থেকে ১৫ লাখ টিভি সেটের চাহিদা রয়েছে। টিভি বাজারে গত দুই বছর থেকে স্মার্ট টিভির চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রায় সম্পূর্ণ বাজার চলে যাবে স্মার্ট টিভির দখলে।

গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেটে এমকে ইলেক্ট্রনিকসের এমডি ফখরুল আমিন বলেন, স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়লে টেলিভিশনের আবেদন কমবে, অনেকের মাঝে এমন ধারণা ছিল। কিন্তু বিষয়টি তেমন নয়। এখন টেলিভিশনও স্মার্ট হয়ে গেছে। বরং সারাদিন মোবাইলের ছোট স্ক্রিনে ভিডিও বা সিনেমা না দেখে শহুরে মানুষ দেখছে টিভির স্ক্রিনে। বাচ্চাদের মোবাইল না দিয়ে টিভিতে কার্টন বা শিক্ষামূলক ভিডিও দেখাচ্ছে।

যদিও বাংলাদেশে টিভি বিক্রিটা সাধারণত উৎসবকেন্দ্রিক বেশি হয়। বিশেষ করে বিশ্বকাপের মতো বড় আয়োজনের সময় টিভি বিক্রি অনেক বেড়ে যায়। এখন এশিয়া কাপ ও আসন্ন ক্রিকেট বিশ্বকাপের কারণে বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছিল গত ফুটবল বিশ্বকাপে। তবে সারা বছরই কমবেশি টেলিভিশন বিক্রি হয়, যা বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে বৃদ্ধি পায়।

অন্যদিকে সারাদেশে বেড়েছে বিদ্যুতায়ন। আবার আমদানির পাশাপাশি দেশেও কিছু কোম্পানি টেলিভিশন তৈরি করছে যে কারণে এখন তুলনামূলক কম খরচে টেলিভিশন কিনতে পারছেন ক্রেতারা। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিদেশি ব্র্যান্ডের একটি ৩২ ইঞ্চি স্মার্ট টিভি যেখানে ৪০ থেকে ৪২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, সেখানে দেশি ব্র্যান্ডের একটি স্মার্ট টিভির দাম ২৪ থেকে ২৮ হাজার টাকা।

ইলেক্ট্রা ইন্টারন্যাশনালের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. মোবারক হোসেন বলেন, ইলেকট্রনিক পণ্যের বিকাশ ঘটাতে সরকার দেশে কারখানা স্থাপন ও পণ্য উৎপাদনে শুল্ক সুবিধা দিচ্ছে। অন্যদিকে বিদেশ থেকে সম্পূর্ণ তৈরি পণ্য আমদানিতে বেশি পরিমাণে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলে দেশীয় কোম্পানি বেশি সুবিধা পাচ্ছে, দেশে বিনিয়োগ বাড়ছে। দেশি ব্র্যান্ড বড় হচ্ছে।