
নিজস্ব প্রতিবেদক// মাত্র চারদিনে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (শেবামেক) ৯৫টি অচল মেশিন সচল করিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মশিউল মুনীর। ন্যাশনাল ইলেকট্রো ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউ অ্যান্ড টিসি) থেকে আসা সাত সদস্যর কারিগরি টিমের সদস্যরা গত চারদিনে হাসপাতালের রেডিওলজি এবং ইমেজিং, প্যাথলজি, সিসিইউ, আইসিইউ, অপারেশন থিয়েটার, চক্ষু বিভাগ, সার্জারি, নাক-কান-গলা বিভাগের বিভিন্ন অকেজো মেশিনগুলো মেরামতের কাজ সম্পন্ন করেছেন।
শনিবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে কারিগরি টিমের সদস্যরা হাসপাতালে অতি প্রয়োজনীয় ৯৫টি অচল মেশিন সচল করার কাজ সম্পন্ন করেছেন। পর্যায়ক্রমে আরো একটি এনজিওগ্রাম, সিটি স্ক্যান, এক্সরে, লেসিক, ওসিটি, লিথোরিপটর, এন্ডোসকপিসহ আরো ২০টি মেশিন সচল করার কাজ হাতে নিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মশিউল মুনীরের বিশেষ অনুরোধে গত সপ্তাহে নিমিউ অ্যান্ড টিসি থেকে পাঁচ সদস্যর কারিগরি টিম হাসপাতালে আসেন। তারা সকল মেশিন সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষানিরীক্ষা করেন। পরবর্তীতে হাসপাতালের নিজস্ব টেকনিশিয়ানের সাথে নিমিউ অ্যান্ড টিসি থেকে আরো দুইজন টেকনিশিয়ানকে এনে এই কারিগরি টিমে সংযুক্ত করেন পরিচালক।
কারিগরি টিমের সদস্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী (অপটিক্যাল) হাফিজুর রহমান বলেন, গত চারদিন ধরে নিমিউ অ্যান্ড টিসি থেকে আসা টিম ছয়টি অ্যানেস্থেসিয়া মেশিন, ২৫টি সাকশন মেশিন, ১০টি আইসিইউ ভেন্টিলেটর, পাঁচটি অটোক্লেভ, একটি সি-আর্ম মেশিন, দুইটি মনিটার, আটটি ওটি টেবিল, পাঁচটি ব্লাড ব্যাংক রেফ্রিজারেটর, ১০টি হাই ফ্লো নাসাল ক্যানুলা, পাঁচটি আইসিইউ বেড, ছয়টি ওটি লাইট, পাঁচটি ডেন্টাল ইউনিট, দুইটি ডায়াথার্মি মেশিন, চারটি ইসিজি মেশিন ও একটি এক্সরে মেশিনসহ ৯৫টি মেশিন মেরামত শেষে সচল করতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, হাসপাতালের একটি করে ইকো, কার্ডিয়াক ডিফাইব্রিলেটর, কার্ডিয়াক মনিটার, ইসিজি ক্যাথল্যাব (এনজিওগ্রাম), সিটি স্ক্যান, চোখের লেসিক, চোখের ফ্যাকো, অপটিক্যাল কোহেরেন্স টমোগ্রাফি (ওসিটি), ইউরোলজি লিথোরিপটর, আরো একটি সি-আরম, দুইটি করে এক্সরে, এন্ডোসকপি মেশিন মেরামত শেষে চালু করা হবে। এসব মেশিনগুলোর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ আমাদের দেশে না থাকায় বিদেশ থেকে সরবরাহ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেজন্য সময় দিতে হবে। দক্ষ টেকনোলজিস্ট কিংবা জনবলের অভাবে দীর্ঘদিন মেশিনগুলো বন্ধ থাকায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ন্যাশনাল ইলেকট্রো ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউ অ্যান্ড টিসি) থেকে আসা কারিগরি টিমের বাকি ছয় সদস্যরা হলেন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) শুভদেব সরকার, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ইলেকট্রনিক্স) অপু সরকার, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (আরএসি) মো. মাহাবুব হোসেন, টেকনিশিয়ান (ইলেকট্রনিক্স) মো. তৌহিদুর জামান, টেকনিশিয়ান আওলাদ হাসান ও কাউছার হোসেন।
হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট মিথুন রায় বলেন, হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রসহ রেডিওলজি এবং ইমেজিং, প্যাথলজি, সিসিইউ, আইসিইউ, অপারেশন থিয়েটার, চক্ষু বিভাগ, সার্জারি ও নাক-কান-গলা বিভাগের প্রায় শতাধিক মেশিন সচল করা হয়েছে। মেশিনগুলো সচল হওয়ায় রোগীরা যেমন সেবা পাবেন, তেমনি আমরাও সেবা দিতে পারবো।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মশিউল মুনীর বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের অনেক মেশিন অকেজো অবস্থায় ছিল। সেগুলো মেরামত করে সচল করা হয়েছে। শনিবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে নিমিউ অ্যান্ড টিসি থেকে আসা সাত সদস্যর কারিগরি টিম জরুরি ভিত্তিতে ৯৫টি অকেজো মেশিন সচল করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। আমরা মেশিনগুলো রোগীর সেবার কাজে লাগাচ্ছি। বাকি মেশিনগুলো সচল করতে যন্ত্রাংশ আমদানি করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। এছাড়া রোগী সেবার মান বৃদ্ধির জন্য আমরা আগামী সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের মধ্যে একটি এমআরআই মেশিন, ক্যাথ ল্যাব এবং সি-আম মেশিন পেতে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সফলতার কথা কেহই বলেনা। আর সেবা জোর করে হয় না, ভালোবাসা দিয়ে নিতে হয়। সমস্যা হলে ধৈর্য্য ধরতে হয়। মানুষকে বুঝতে হবে হাসপাতালে রোগী সেবার জন্য যে পরিমাণে জনবল প্রয়োজন তা আমাদের নেই। তাই সবাইকে এ ব্যাপারে যেমনি সচেতন হতে হবে, তেমনি আমাদের কাজে সহযোগিতা করতে হবে।