
নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারি বিধিনিষেধের কারণে দীর্ঘ ৯ মাস বন্ধ থাকার পর আবারও জেগে উঠছে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনগামী সমুদ্রপথ। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়াস্থ বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে দ্বীপে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে।
সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানিয়েছেন, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি- এই দুই মাসে মোট ৭টি জাহাজ এই রুটে চলাচলের প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে প্রথম দিন কতটি জাহাজ চলবে তা নির্ভর করবে পর্যটকের সংখ্যার ওপর।
প্রস্তুত থাকা জাহাজগুলো হলো- কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, বার আউলিয়া, এমভি বে ক্রুজ, এমভি কাজল, কেয়ারী সিন্দাবাদ, কেয়ারী ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন এবং আটলান্টিক ক্রুজ।
হোসাইন ইসলাম বাহাদুর আরও বলেন, ৭টি জাহাজের অনুমোদন এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত না হলেও, আগামী ১০ দিনের মধ্যে অনুমোদন প্রক্রিয়া শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জাহাজগুলো সমুদ্রযাত্রার জন্য প্রস্তুত।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নভেম্বর মাসে সেন্টমার্টিনে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ। ফলে পর্যটকদের দিনে গিয়ে দিনে ফিরতে হয়। কক্সবাজার থেকে দ্বীপে পৌঁছতে সময় লাগে ৭- ৭.৫ ঘণ্টা, আর ফিরতে আরও সমপরিমাণ সময়। অর্থাৎ পুরো যাত্রায় ১৪–১৫ ঘণ্টা সমুদ্রভ্রমণ, কিন্তু দ্বীপে অবস্থান করার সুযোগ মাত্র ১ ঘণ্টা। এই অস্বস্তিকর সময়সূচির কারণে পর্যটকরা আগ্রহ দেখাননি- ফলে নভেম্বরে জাহাজ চলাচল শুরু করা সম্ভব হয়নি।
ডিসেম্বর- জানুয়ারিতে রাত্রিযাপনের অনুমতি থাকায় স্বাভাবিকভাবেই পর্যটকের ভিড় বাড়বে- যা জাহাজ চলাচলের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে পরিবেশ রক্ষায় সরকার এবার অত্যন্ত কঠোর। সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী- নভেম্বরে পর্যটকেরা শুধু দিনে ভ্রমণ করতে পারবেন; রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি- এই দুই মাস রাত্রিযাপনের অনুমতি রয়েছে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২,০০০ পর্যটক দ্বীপে যেতে পারবেন।
বিআইডব্লিউটিএ এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো জাহাজ চলাচল করতে পারবে না। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অনুমোদিত ওয়েব পোর্টাল থেকে অনলাইন টিকিট নিতে হবে। প্রতিটি টিকিটে থাকবে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড- এ ছাড়া টিকিট ‘নকল’ হিসেবে গণ্য হবে। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত (৯ মাস) আবার পর্যটক যাতায়াত বন্ধ থাকবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ করা, বারবিকিউ- সবই নিষিদ্ধ। কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রি নিষিদ্ধ। সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক- ঝিনুক ও যে কোনো জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা কঠোরভাবে দণ্ডযোগ্য। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যান চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
প্লাস্টিক বহন নয়- বিশেষ করে একবার ব্যবহার্য পণ্য যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক স্ট্র, চামচ, সাবান-শ্যাম্পুর ছোট প্যাকেট, ৫০০- ১০০০ মিলিলিটারের বোতল ইত্যাদি।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, এবার ভ্রমণের সময়সূচি, জাহাজের যাতায়াত, এবং পর্যটকের সংখ্যা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে। ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত পুরোপুরি বন্ধ- অর্থাৎ নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত মোট তিন মাসই পর্যটকরা প্রবাল দ্বীপে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।