
নিজস্ব প্রতিবেদক// বরিশালের ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। ইতোমধ্যে সরকারি হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাটা ১৫ হাজার ছুতে চলেছে। মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হয়েছেন ৩৩ জন, যা শুধু সরকারি হাসপাতালে।
চলতি মাসের প্রথম ৭ দিনেই বরিশালের সরকারি হাসপাতালগুলোতে আরো প্রায় ১ হাজার ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, সরকারি হাসপাতালে ভর্তির পরিসংখ্যান দিয়ে ডেঙ্গুর বাস্তব অবস্থা বোঝার কোন সুযোগ নেই। কারণ মানুষ তাদের শরীর ও মনের অত্যন্ত সংকটজনক অবস্থা ছাড়া সরকারি হাসপাতালের শরণাপন্ন হন না। সে হিসেবে গত কয়েকমাসে বরিশালের সরকারি হাসপাতালে প্রায় ১৫ হাজার ডেঙ্গু রোগী ভর্তির কথা বলা হলেও বাস্তবে প্রকৃত ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা অন্তত ৫ গুন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ।
অপরদিকে চলতি মাসের শুরু থেকেই বরিশাল অঞ্চল জুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্রের মতে গত কয়েক বছর ধরে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরকে ডেঙ্গুর ‘পিক টাইম’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
গত মাসে বরিশালের সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রায় ৪ হাজার ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হবার পাশাপাশি এ সময়ে চিকিৎসাধীন ১৪ জনের মৃত্যু ঘটে।
এদিকে, চলতি মাসের প্রথম ৭ দিনেই আরো প্রায় ১ হাজার ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন বরিশালের সরকারি হাসপাতালগুলোতে। এর মধ্যে শুধু বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই প্রায় দেড় হাজার ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া মহানগরীর জেনারেল হাসপাতাল সহ অন্যান্য হাসপাতালগুলোতেও আরো শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) পর্যন্ত বরিশাল সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজারের কাছে পৌঁছলেও এরমধ্যে মারা গেছেন ৩৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বারবারই ডেঙ্গু সম্পর্কে জন সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বরিশাল সিটি করপোরেশন সহ সব পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে তাগিদ দেয় হচ্ছে।
বিভাগীয় পরিচালক স্বাস্থ্য ডা. শ্যামল চন্দ্র মন্ডল জানান, গত কয়েক বছর ধরেই সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরকেই ডেঙ্গুর ঝুঁকিপূর্ণ সময় বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ সময়ে থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের ফলে বিভিন্নস্থানে পানি জমে এডিস মশার লার্ভা সহজেই ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
তার মতে ডেঙ্গু থেকে রেহাই মিলতে এডিস মশার বংশ বিস্তার প্রতিরোধের কোন বিকল্প নেই। মঙ্গলবার দুপুরের পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের সরকারি হাসপাতালগুলো থেকে ১১৮ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হলেও, এ সময়ে নতুন করে আরো ১৩১ জন ডেঙ্গু রোগীকে ভর্তি করা হয়েছে। ফলে দুপুর পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৪৫৪ জন ডেঙ্গুরোগী। যার মধ্যে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ১২২ জন ও জেনারেল হাসপাতাল সহ জেলার অন্য হাসপাতালগুলোতে আরো ৪৯ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে।
সেপ্টেম্বর মাসে চলতি বছরের সর্বাধিক সংখ্যক, প্রায় ৪ হাজার ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হলেও অক্টোবর শুরু থেকে পরিস্থিতি আরো নাজুক।
এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, গত ১ অক্টোবর ৮৭ জন ডেঙ্গুরোগী সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হবার পরে ২ অক্টোবর ১১৫ জন, ৩ অক্টোবর ৬৩ জন, ৪ অক্টোবর ১৩২ জন, ৫ অক্টোবর ১৯৫ জন, ৬ অক্টোবর ১৭৪ জন এবং ৭ অক্টোবর আরো ১৩১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ বরিশালের সরকারি হাসপাতাল সমুহে।