
আরিফ হোসেন// ১৮ বছর বয়সী রাজিয়া কখনো বসে, কখনো শুয়ে কাটছেন তার অসুস্থ জীবন। “কী করব, ফুসফুসে পানি জমে গেছে। অপারেশন খুবই জরুরি। তবে কিভাবে করব, আমার কাছে কোনো টাকা নেই। আল্লাহ তালা যে কয়দিন বাঁচিয়ে রাখেন। তবে অসুস্থতার কষ্ঠে মাঝে মাঝে মনে হয় মরে যাই। তখন ইচ্ছে হয় এই রোগ থেকে নিজেই মুক্তি পাই।”— চোখে পানি নিয়ে এসব কথা বলছিলেন বরিশাল নগরীর ১০ নং ওয়ার্ডের ভাটার খাল (বস্তি) বাসিন্দা ও দিনমজুর আবদুল রাজ্জাক ফকিরের মেয়ে রাজিয়া।
রাজিয়া জানান, গত পাঁচ মাস পূর্বে হঠাৎ প্রচণ্ড জ্বর হয়েছিল এবং সঙ্গে কাশি হচ্ছিল। ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ালে জ্বর কমে যেত, কিন্তু কাশি কমেনি। পরবর্তীতে ডাক্তার দেখালে যক্ষ্মা রোগ ধরা পড়ে। চিকিৎসা করতে করতে ফুসফুসে পানি জমে গেছে। বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ডাক্তাররা বিভিন্ন পরীক্ষা শেষে উন্নত চিকিৎসা করার পরামর্শ দিয়েছেন, তবে অর্থের অভাবে চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে না। তাই রাজিয়াকে বিছানায় শুয়ে থাকতে হচ্ছে।
রাজিয়ার বাবা আবদুল রাজ্জাক জানান, প্রায় পাঁচ মাস পূর্বে রাজিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন। ডাক্তার দেখালে টিবি (যক্ষ্মা) রোগ ধরা পড়ে। কিন্তু স্বামী সাব্বির ৩ বছরের সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে যান এবং এখন পর্যন্ত রাজিয়ার কোনো খোঁজ খবর নিচ্ছেন না।
কান্না জড়িত কণ্ঠে রাজ্জাক বলেন, “স্বামী ফালিয়ে গেলেও আমি তো ফালাতে পারছি না। কারণ ওতো আমার জন্মের সন্তান। আমি আগে ভ্যান গাড়ি চালিয়ে সংসার চালাতাম। এখন বয়সের ভারে শারীরিক অবস্থাও ভালো না, কাজ করতে পারি না। সংসার চলে না খেয়ে। মেয়ের যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা করাবো কি করে।”
তিনি আরও বলেন, “বেঁচে থাকতে আমার চোখে সামনে মেয়েটি অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছে, তাই মনে হয় বেচে থাকার চেয়ে মরে গেলেই ভালো হয়।”
রাজিয়া জানান, “আমার স্বামী আমার গর্ভের সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। চার মাসের বেশি সময় ধরে তিনি কোনো খোঁজ খবর নিচ্ছেন না। আমি অসুস্থ অবস্থায় আমার নিজের মেয়েকে একবারও দেখতে পারিনি। এর চেয়ে বড় কষ্ট আর কোনো হতে পারে না।”
চিকিৎসকরা জানান, ফুসফুসের যক্ষ্মা সবচেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর। এছাড়া অনেকের মস্তিষ্কে সংক্রমণ, মেরুদণ্ডে সমস্যা দেখা দেয়। এই রোগে দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ নিতে হয়, যা ছয় থেকে নয় মাস পর্যন্ত। নিয়মিত ওষুধ সেবনে রোগ সারানো সম্ভব, তবে খরচ কিছুটা বেশি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজ্জাকের অর্থনৈতিক অভাবের সংসারে রাজিয়াকে ১৪ বছর বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়। স্বামীর শারীরিক নির্যাতনের পর রাজিয়া এখন টিবি রোগে আক্রান্ত। স্বামী পালিয়ে যাওয়ার কারণে রাজিয়া অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় বাবার সামনে ভুগছেন।
অসহায় বাবার আকুতি: “ঘরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আছিয়া! অভাবের সংসারে ১৪ বছর বয়সেই এক তথাকথিত ‘প্রেমিক’ ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছিল। তারপর শুরু হয় নির্যাতনের নতুন অধ্যায়—প্রতিদিনের মারধর, গালিগালাজ, অপমান। একদিন মেয়েটি টিবি রোগে আক্রান্ত হতেই স্বামী পালিয়ে যায়। এখন আছিয়া বিছানায় শুয়ে ধুঁকছে মৃত্যুর মুখে। আমি গরিব মানুষ, আমার মাইয়াটাকে বাঁচান।”
রাজিয়ার চিকিৎসার জন্য অর্থিক সহায়তা পাঠানোর জন্য বাবা রাজ্জাকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে, মোবাইল নম্বর: ০১৭৬২-৫৫২৮৭৯।