
দীর্ঘদিন ধরে নদীর বুকে নৌকায় ভেসে থাকা বরিশালের মান্তা জনগোষ্ঠী আজও জীবনের ন্যূনতম চাহিদা থেকে বঞ্চিত। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসন সবকিছুই তাদের কাছে বিলাসিতা। তবে এবার তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের সূচনা করেছে বরিশাল জেলা প্রশাসন। টেকসই পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ৩০০ মান্তা পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে হাতে নেওয়া হয়েছে ‘স্বাবলম্বী কর্মসূচি’। এতে যাদের জীবন নদীর স্রোতে ভেসে যেত, তারাই এখন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে ডাঙায় ফেরার।
এই কর্মসূচির আওতায় সোমবার বরিশাল সদর উপজেলার লাহারহাট এলাকায় তাদের ৩০ কেজি চালসহ নিত্যপণ্য প্রদান করেন জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন। এরপর তাদের সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া, ক্ষুদ্র ব্যবসায় উদ্বুদ্ধকরণ এবং পুঁজি ব্যবস্থা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সমাজসেবা কার্যালয়কে। এছাড়া ভোটার আইডি কার্ড তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারি টাকায় তাদের ঘর প্রদান এবং কবরস্থানের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ। প্রথম পর্যায়ে তাদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ, ক্ষুদ্র ব্যবসায় উদ্বুদ্ধকরণ ও পুঁজি সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে জেলা সমাজসেবা কার্যালয় দায়িত্ব পালন করছে।
বৃদ্ধা মায়া মান্তা বলেন, ‘ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাবে, ঘরে আলো জ্বলবে এই ভাবনাটাই এখন স্বপ্ন না, সত্যি হচ্ছে। আগে আমরা শুধু নদীতে ভাসতাম, এখন মনে হয় মাটি পাব। এরচেয়ে শান্তির আর কী আছে?
রহিম মান্তা বলেন, তিনি সারাজীবন মাছ ধরেই পরিবার চালিয়েছেন। ঝড়-বন্যার সঙ্গে লড়াই করতে আর ভালো লাগছে না তার। সরকারি সহায়তায় ডাঙায় ব্যবসা করে জীবন বদলাতে চান তিনি।
সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, ‘আমরা চাই তারা আত্মনির্ভরশীল হোক। প্রশিক্ষণ শেষে যারা কাজ শুরু করবে, তাদের পুঁজি সহায়তা দেওয়া হবে।’ পাশাপাশি সন্তানদের সুশিক্ষা নিশ্চিতসহ জীবনমান উন্নয়নে সব সময় তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বলে জানান তিনি।
বরিশাল জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘মান্তা সম্প্রদায় এই দেশেরই নাগরিক। তাদের জীবনযাপন যেন নদীর জলে না ভাসে, তার জন্য আমরা ধাপে ধাপে টেকসই পুনর্বাসন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। জমি বরাদ্দ ও ঘর নির্মাণের কার্যক্রমও হাতে নেওয়া হয়েছে। এমনকি কবরস্থানের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। তাদের সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’