
নিজস্ব প্রতিবেদক :: হিজাব পরতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত শিক্ষক ফজিলাতুন নাহারকে পুনর্বহাল, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং ‘অপপ্রচারকারীদের’ শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখার সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। তারা বরখাস্ত শিক্ষক ফজিলাতুন নাহারকে পুনর্বহাল, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং ‘অপপ্রচারকারীদের’ শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন।
বুধবার (২৭ আগস্ট) সকাল থেকে থেকে দুপুর পর্যন্ত উত্তাল ছিল ক্যাম্পাস। সাময়িক বরখাস্ত শিক্ষকের পক্ষ অবস্থান নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বসুন্ধরা শাখা ক্যাম্পাস ও আশপাশের সড়কে অবস্থান নিয়ে মিছিল-সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে ন্যায়বিচার চেয়েছেন। মিছিল ও সমাবেশ চলাকালে ‘মিথ্যা অভিযোগ মুছে দাও, শিক্ষকের ন্যায় ফিরিয়ে দাও’, ‘জাস্টিজ ফর নাহার আপা’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিজ ফর নাহার আপা’, ‘শিক্ষক জাতির দিশারী, তার সম্মান রক্ষা করি’, ‘শিক্ষকের ন্যায়বিচার চাই, সত্যের কোনও বিকল্প নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের হাতে এসময় বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড ছিল।
হিজাব পরায় ছাত্রীদের ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক ফজিলাতুন নাহারকে সাময়িক বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগমের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
নোটিসে বলা হয়, স্কুলের বসুন্ধরা প্রভাতি শাখার ষষ্ঠ শ্রেণির একটি শ্রেণিকক্ষ থেকে ২২ জন শিক্ষার্থীকে হিজাব পরার কারণে ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এবং অ্যাডহক কমিটির (অস্থায়ী কমিটি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
আন্দোলনরত দশম শ্রেণির ছাত্রী মেহের আফরোজ কনক বলেন, আমাদের শিক্ষকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে। তিনি ছাত্রীদের ড্রেসকোড মানতে বলেছিলেন। তাই তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে।
আন্দোলনরত নবম শ্রেণির ছাত্রী রোকাইয়া বিনতে মাজহার বলেন, আমাদের আপা হিজাব পরতে নিষেধ করেননি, তিনি সঠিকভাবে হিজাব পরতে বলেছিলেন। প্যানেল শিক্ষার্থী যারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছিলেন, তারা শেষ পিরিয়ডে ওই ক্লাসে গেলে আপা তাদের বলেছিলেন বাইরে গিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে।
প্যানেল ছাত্রীরা ড্রেসকোড না মানা ছাত্রীদের বাইরে নিয়ে ৮-১০ মিনিট কথা বলেন। এই ১০ মিনিটের জন্য আমাদের শিক্ষকের নামে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আমরা আপার পুনর্বহাল, অপপ্রচারকারীদের শাস্তি চাই।
ভিকারুননিসার সাবেক ছাত্রী আনিসা করিম বলেন, আমি ২০০৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছি। শুধু নাহার আপা নয়, অন্য শিক্ষকরাও কখনও আমাদের হিজাব নিয়ে কোনও কথা বলেননি।
আমার বিশ্বাস আপার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে সেগুলো ভিত্তিহীন। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই, যেসব গণমাধ্যমসহ যারা আপার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ছড়িয়ে তার মানহানি করার চেষ্টা করছেন, তাদের বিচার চাই।
হিজাব পরায় ছাত্রীদের ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক ফজিলাতুন নাহার বলেন, আমি এই কাজটা করিনি। আর এই ক্লাসে ২২ জন মেয়ে হিজাব পরে না। ৯ বা ১১ জন পরে। আমি মেয়েদের বলেছি তোমরা হিজাব পরে স্কুলে আসবা।
দেড় দশকের বেশি সময় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখায় কর্মরত ওই শিক্ষক সেদিনের ঘটনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি যখন ক্লাসে গেলাম, গিয়ে দেখি ভলান্টিয়াররা বাচ্চাদের চেক করছে, পোশাক ঠিক আছে কি না, নখ বড় কি না, চুল বাধা ঠিক আছে কি না।
তখন আমি ওদের (ভলান্টিয়ার) বললাম, তোমরা সারা দিন কি করলা? বলে আপা আমরা সময় পাইনি। তখন বললাম, তাই বলে লাস্ট পিরিয়ডে চেক করবা? তা ঠিক আছে যাও, তোমাদের যা যা কাজ তোমরা বাইরে নিয়ে যাও এদের, বাইরে নিয়ে তোমাদের দায়িত্ব পালন কর, এটা বলছি, মেয়েদের বেরও করে দিইনি।” কর্তৃপক্ষ সাময়িক বরখাস্ত করার আগে শোকজ করেনি দাবি করে তিনি বলেন, আমি আইনি পদক্ষেপ নেব।
আন্দোলনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আমরা একটি তদন্ত পরিচালনা করছি।আমাদের বিশ্বাস, তদন্তে সত্য ঘটনা উঠে আসবে।
সে অনুসারে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাব। সাময়িক বরখাস্ত অধ্যক্ষ হিসেবে আপনি করেছেন নাকি গভর্নিং বডি করেছে, জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম বলেন, অ্যাডহক কমিটি করেছে।