
বেলায়েত বাবলু // বরিশালের নির্ভিক সাংবাদিক, বরিশাল প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লিটন বাশার মারা গেছেন ২০১৭ সালের ২৭ জুন। ওইদিন গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের বুখাইনগরে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত্যু ঘোষনা করেন। তাঁর আকস্মিক অকাল এ মৃত্যু বরিশালের সাংবাদিক অঙ্গনে গভীর শোকের সৃষ্টি করে। লিটন বাশার মারা যাওয়ার সময় যেমন বয়োবৃদ্ধ পিতাকে রেখে গেছেন তেমনি রেখে গেছেন আড়াই বছরের একমাত্র সন্তান শ্রেষ্ঠকে।
তাঁর মরদেহ শেবাচিম হাসপাতাল থেকে প্রথমে নেয়া হয়েছিলো বরিশাল নগরীর তাঁর নিজবাসভবনে। পরে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বরিশাল প্রেসক্লাবে নেয়া হয়েছিলো। নগরীর সদর রোডে হয়েছিলো তাঁর প্রথম নামাজে জানাযা। পরে তাঁকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়। সেখানেই চির নিদ্রায় শায়িত আছেন তিনি। মৃত্যুর ঠিক আট বছর পর গত সোমবার ৮ সেপ্টেম্বর মারা গেছেন তাঁরই আপন খালাতো ভাই বরিশাল প্রেসক্লাবের বর্তমান কার্যকরী কমিটির সাহিত্য সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও জাতীয় দৈনিক কালবেলা পত্রিকার বরিশাল ব্যুরো প্রধান আরিফিন তুষার। রাতে নিজ অফিসে অবস্থানকালে হঠাৎ অসুস্থবোধ করে তুষার। সহকর্মিরা খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সেখান থেকে তুষারের লাশ প্রথমে নেয়া বরিশাল নগরীর কলেজ রো এলাকার বাসভবনে। পরে তার মরদেহ নেয়া হয় বরিশাল প্রেসক্লাবে। সেখানে শেষ বিদায় জানানোর পর তার প্রথম নামাজে জানাযা নগরীর সদর রোডে অনুষ্ঠিত হয়।
সর্বশেষ তার মরদেহ নেয়া হয় হিজলা উপজেলার আন্ধারমানিক ইউনিয়নের গ্রামের বাড়িতে। সেখানেই তুষারকে সমাহিত করা হয়। এখন থেকে অনন্ততকাল সেখানেই চির নিদ্রায় শায়িত থাকবে তুষার। লিটন বাশারের মতোই আরিফির তুষার মারা যাওয়ার সময় যেমন বয়োবৃদ্ধ পিতাকে রেখে গেছেন তেমনি রেখে গেছেন দেড় বছরের একমাত্র সন্তানকে। প্রয়াত লিটন বাশার বরিশালের একাধিক দৈনিকে কাজ করার পাশাপাশি জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকের বরিশাল অফিস হিসেবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ করে গেছেন। লিটন বাশারের পথেই হাটতে গিয়ে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলো প্রিয় অনুজ তুষার।
বরিশালের একাধিক দৈনিকে কাজ করার পর সর্বশেষ মৃত্যুর পূর্বসময় পর্যন্ত সে জাতীয় দৈনিক কালবেলা পত্রিকার বরিশাল ব্যুরো প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। লিটন বাশার বরিশাল প্রেসক্লাবের কার্যকরী সংসদে একাধিকবার নির্বাচিত হয়েছিলেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন সাংবাদিক নেতা হিসেবে। নির্বাচিত হয়েছিলেন বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকও। বয়সে অনেক ছোট হলেও লিটন বাশারের আদর্শকে লালন করে চলা আরিফিন তুষারও বরিশাল প্রেসক্লাবের কার্যকরী সংসদের প্রতিনিধি হিসেবে একাধিকবার নির্বাচিত হয়েছে। পাশাপাশি সাংবাদিকদের অন্যতম সংগঠন বরিশাল জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ হিসেবে দায়িত্বরত ছিলো।
প্রয়াত সাংবাদিক লিটন বাশার মেধা-মননে অনেক উচু স্থানে অবস্থান করেছেন তাঁর কর্ম দক্ষতার কারণে। আর তারই ছোট ভাই আরিফিন তুষার লিটন বাশারকে অনুসরণ করতে গিয়ে মানুষের সাথে মিশে গেছে খুব সহজে। দলমত নির্বিশেষে সকলের কাছে একজন প্রিয় মানুষ হয়ে ওঠা তুষার কোন স্বার্থ ছাড়াই অতি গোপনে মানুুষের উপকার করে গেছে। জন্মিলে মরতে হবে এটা চিরন্তন সত্য। কিন্তু কিছু আপনজনের মৃত্যু যে শূন্যতার সৃষ্টি করে পূরণ হবার নয়। নিভৃত গ্রামের বাড়িতে চি নিদ্রায় শায়িত হয়েছেন সাংবাদিক লিটন বাশার, আরিফিন তুষার। এখন আর তাদের পদচারণায় মুখরিত হবেনা বরিশাল প্রেসক্লাব। ক্লাবের বার্ষিক পিকনিকে তারা জমিয়ে রাখবেনা সকলকে। আমরাও ধীরে ধীরে তাদের কথা ভুলে যাবো। মনে থাকবেনা মৃত্যুবার্ষিকীর তারিখও। কবর জিয়ারতের জন্য ছুটে যাবোনা চরমোনাই বুখাইনগরে অথবা হিজলার আন্ধারমানিকে। এরপরে কেউ না কেউ লিটন বাশার, আরিফিন তুষারকে মনের অজান্তেই স্মরণ করে চোখের কোনে আবিস্কার করবে কয়েক ফোটা পানি। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করবো আমরা যেনো অকৃতজ্ঞ না হই তুমি সেই তৌফিক দান করো।