
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল// মেয়ের পরকীয়া ঢাকতে জামাইকে দাওয়াত করে ডেকে এনে বিষ খায়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে শ্বশুর বাড়ির লোকদের বিরুদ্ধে। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের লাফাদী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত সাগর হাওলাদার ওই গ্রামের মো. আনিসুর রহমানের ছেলে এবং পেশায় তিনি বরিশাল নগরীর কাউনিয়া বিসিক ঝুটমিলের শ্রমিক।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতাল মর্গে তার মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
নিহতের বাবা আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, দুই বছর আগে পারিবারিক প্রস্তাবের মাধ্যমে সাগর হাওলাদারের সঙ্গে বিয়ে হয় একই গ্রামের মুন্সিবাড়ীর মাহাবুব আলমের মেয়ে মারিয়ার। বিয়ের পর এক হিন্দু যুবকসহ তিন যুবকের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ায় মারিয়া। যা গত ছয় মাস আগে ধরা পড়ে। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ শুরু হলে গত দেড় মাস আগে বাবার বাড়ি চলে যায় মারিয়া। ঘটনার দুদিন আগে ১৭ সেপ্টেম্বর সাগরের কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা ধার নেয় তার শাশুড়ি সুখি বেগম। টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় সাগরকে শ্বশুর বাড়িতে ডেকে নেন তিনি। এরপর রাতে সাগর বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে দাবি করে তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করে পালিয়ে যান শ্বশুর বাড়ির লোকজন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে খবর পেয়ে ওইদিন রাত ১১টার দিকে হাসপাতালে যান সাগরের বাবা আনিসুর রহমান। এর কিছুক্ষণ পরেই মৃত্যু হয় সাগরের। আনিসুর রহমানের দাবি, মৃত্যুর আগে সাগর জানিয়ে গেছে, তাকে মারধর করে জোরপূর্বক বিষপান করিয়েছে শ্বশুর বাড়ির লোকজন।
এদিকে, সাগরের মৃত্যুর পর শনিবার সকালে তার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যায় স্বজনরা। পরে এটি পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ এনে থানায় লিখিত অভিযোগ করে সাগরের পরিবার। এর পরিপ্রেক্ষিতে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ সাগরের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
সাগরের মেঝখালা সাথী বেগম বলেন, বিয়ের পর ছয় মাস ধরে একাধিক যুবকের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ায় গৃহবধূ মারিয়া। এর একাধিক ভিডিও ফুটেজ আসে আমাদের কাছে। বিষয়টি জানাজানি হলে মারিয়ার বাবা বিদেশে যাবেন বলে মারিয়াকে বাড়িতে নিয়ে যায়। এরপর গত শুক্রবার রাতে মারিয়া, তার মা সুখি, বাবা মাহাবুব আলম এবং ভাই মিলে সাগরকে মারধরের পর মুখে বিষ ঢেলে হত্যা করেছে। সাগরের মাথায় আঘাত এবং নাক-মুখ দিয়ে রক্তও বের হতে দেখা যায়।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাগরের শাশুড়ি সুখি বেগম। তার দাবি অভিমানে বিষপান করেছে সাগর।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার অফিসার ইন-চার্জ আল মামুন উল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই। তাছাড়া বিষপানের কারণে নাক-মুখ থেকে রক্ত বের হতে পারে বলে জানিয়েছেন ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।